নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার বিকেলে লন্ডন থেকে পাঠানো একটি ফুলের তোড়া ও কেক তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার এসব উপহার পৌঁছে দেন প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) ফেরদৌসী হাসান সেলিমের হাতে। বিকেল ৬টার দিকে এই উপহার হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান।
ফুল ও কেক পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বলে জানান তিনি।
প্রফেসর ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
তবে এ বছর সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে কোনও আনুষ্ঠানিক জন্মদিন উদযাপন করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষে সরকারিভাবে কোনও কর্মসূচি রাখা হয়নি।
এদিকে শুক্রবার ঢাকার সাভারের জিরাবোতে সোশ্যাল কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনব্যাপী ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’ উদ্বোধন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ইউনূস, তবে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।
বিশ্বব্যাপী মাইক্রোক্রেডিটের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলা এই অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৬ সালে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য এবং একাধিক মামলার মুখোমুখি হন তিনি।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে ৮ আগস্ট প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের আহ্বানে তিনি ওই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বর্তমানে তাঁর সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের পাশাপাশি সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য কাজ করছে।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রফেসর ইউনূসের পিতা ছিলেন দুলা মিয়া সৌদাগর এবং মাতা সুফিয়া খাতুন। তাঁর স্ত্রী আফরোজি ইউনূস ও দুই কন্যা রয়েছে।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেন। ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান এবং ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন।