জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিঃসন্দেহে তারেক রহমান। অনুপস্থিত থেকেও তিনি উপস্থিত—তার প্রভাব দলীয় কর্মীদের দিশা দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে।
সাম্প্রতিকতম উদাহরণ যশোরের “ফর্সা মেয়ে” আফিয়ার ঘটনা। অস্বাভাবিক রঙের কারণে বাবা পরিবার ছেড়ে চলে যান। তিন বছরের শিশু নিয়ে যখন মা মনিরা অসহায়, তখনই এগিয়ে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি মা-মেয়ের দায়িত্ব নেন, দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন আফিয়ার বাবার মনোভাব বদলাতে। এই অভিভাবকত্ব শুধু মনিরা-আফিয়াকেই নয়, লাখো সাধারণ মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
২০০৭-এর ওয়ান-ইলেভেন থেকে আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের সমন্বিত প্রোপাগান্ডা চালায়। তাকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্য ছিল একটাই—জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকারী যে মানবিক রাজনীতি নিয়ে এসেছেন, তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে না দেয়া। কিন্তু ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লব সব ষড়যন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ তারেক রহমানকে পুনরাবিষ্কার করেছে—দেশপ্রেমিক, দূরদর্শী, সংকটে-সুযোগে দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে।
১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণকারী তারেক রহমান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র। ক্ষমতার কাছাকাছি বেড়ে উঠেও ক্ষমতার লোভ তাকে স্পর্শ করেনি। বরং পিতা-মাতার আদর্শে গড়ে উঠেছেন মানবতা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত নেতা। এজন্যই আজ লাখো বাংলাদেশি তাকে দেখে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।
১৯৮৯ সালে বগুড়া জেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে প্রবেশ। সেখান থেকে শুরু তার যাত্রা—প্রাইভিলেজ নয়, তৃণমূল থেকে শিক্ষা নিয়ে। প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে মিশে, তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝে, বাস্তব সমাধান খুঁজে রাজনীতিকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছেন। কৃষকের স্বপ্ন, শ্রমিকের কষ্ট, যুবকের আকাঙ্ক্ষা—সব যেন তার রাজনৈতিক দর্শনের অংশ। তাই তার কথা মানুষের হৃদয়ে ধরা দেয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিপুল জয়ের পেছনে তার পর্দার আড়ালের ভূমিকা অসামান্য। খালেদা জিয়ার সরকার গঠনের পর তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে সাংগঠনিক কাজে মনোনিবেশ করেন। তার নেতৃত্বে দল দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। পরে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত করা হয় এবং চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেখানে তিনি আধুনিক নীতি গবেষণা ও পরিকল্পনা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। শিক্ষিত পেশাজীবী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-শিল্প-মানবাধিকার-পররাষ্ট্রনীতি-প্রযুক্তি সব ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।
তার দূরদর্শী রাজনীতির অন্যতম নিদর্শন “তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন”। ২০০২ থেকে গ্রামবাংলার প্রতিটি প্রান্তে গিয়ে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেন, যুব সমাজকে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এই উদ্যম তাকে “যুবকের গর্ব” উপাধি এনে দেয়।
২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে “ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা”র মাধ্যমে দলকে নতুন প্রাণ দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঠিক দিকনির্দেশনায় প্রতিটি বিএনপি কর্মীর মধ্যে নেতৃত্বের সম্ভাবনা জাগ্রত করা যায়।
রাজনীতির বাইরেও তারেক রহমানের সামাজিক কল্যাণে অঙ্গীকার অটুট। জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার প্রতিজ্ঞায় গঠন করেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন—যা আজ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগামী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
শেখ হাসিনার ষোল বছরের স্বৈরাচার শেষ। যুব ঝড় অহংকার ও নিপীড়ন উড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসছে। বিপ্লবের অর্জন রক্ষা করতে, গণতান্ত্রিক যাত্রা এগিয়ে নিতে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও খালেদা জিয়ার জনকেন্দ্রিক রাজনীতি ছড়িয়ে দিতে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের বিকল্প নেই। তার নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস লেখা যাবে। বিপ্লবের বাংলাদেশ এখন তার অপেক্ষায়।
দূরদর্শী নেতা তারেক রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আপনার বিশেষ দিনে হৃদয়ের গভীরে শুভকামনা।
