টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার সুরক্ষা আদেশ জারি করেছে। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, নৌকা চলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার এবং জলজ বন ধ্বংস রোধে এই আদেশ দেওয়া হয়।
আজ এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ওয়াটার অ্যাক্ট ২০১৩-এর ২২ ও ২৭ ধারায় এই আদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতির অংশ।
দুই হাওরে পাখি শিকার (অতিথি পাখি সহ), অতিথি পাখি অধ্যুষিত এলাকায় বাণিজ্যিক হাঁস পালন, গাছ কাটা এবং জলজ বনে কোনো ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হিজল ও করচের মতো জলজ গাছের ডাল কেটে ঘের তৈরি বা মাছের আশ্রয়স্থল বানানো নিষেধ।
পর্যটক, হাউসবোট ও নৌযান জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা হাওর বিভাগ চিহ্নিত পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল বা সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। এর মধ্যে পাখি, মাছ ও অন্যান্য জলজ বা বন্য প্রাণীর আবাসস্থল বা প্রজনন ক্ষেত্র রয়েছে।
সরকারি অনুমোদন এবং পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন ছাড়া জমির ধরন পরিবর্তন বা প্রাকৃতিক জলপ্রবাহে বাধা দেওয়া যাবে না।
হাওরের জমি ও জলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ক্ষতি বা পরিবর্তন করতে পারে—এমন কোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধ। শিক্ষা সফর ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমতি লাগবে।
হাওর এলাকায় জমি ও জলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ক্ষতি বা পরিবর্তন করতে পারে—এমন কোনো কার্যক্রম করা যাবে না। শিক্ষা সফর ও বিদেশি পর্যটক পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট ডেপুটি কমিশনারের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
নৌকা ও হাউসবোটে যাত্রী সংখ্যা অনুমোদিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে। কোনো নৌযান অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না বা মাছ ধরার সরঞ্জাম বহন করতে পারবে না। নৌকা চলাচল ও নোঙর করতে নির্ধারিত রুট অনুসরণ করতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ট্যুর অপারেটরদের ঝড়, ভারী বৃষ্টি বা বিজলীতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপারেটর ও পর্যটকদের স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। হাউসবোট ও নৌযানে উচ্চস্বরে গান বা পার্টি নিষিদ্ধ।
শব্দদূষণকারী ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহার করা যাবে না। এককালীন প্লাস্টিক বহন নিষেধ। নিষিদ্ধ জাল বা বিদ্যুৎ শক দিয়ে মাছ ধরা নিষেধ।
হাওর এলাকায় অনুমোদন ছাড়া বালু, পাথর বা মাটি উত্তোলন বা লিজ দেওয়া নিষেধ। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের জলাশয় পুরোপুরি শুকিয়ে ফেলা যাবে না। ট্যুর অপারেটররা ১০০ ফুটের বেশি লম্বা নৌকা বা হাউসবোট চালাতে পারবেন না।
পার্শ্ববর্তী বাড়ি, কারখানা বা প্রতিষ্ঠান থেকে তরল বা কঠিন বর্জ্য হাওরের জলে ফেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হাওর এলাকায় পাকা সড়ক নির্মাণ এড়িয়ে চলতে হবে। অত্যন্ত প্রয়োজনে অনুমোদন, পরিবেশ প্রভাব মূল্যায়ন এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করে কাজ শুরু করতে হবে।
এই সুরক্ষা আদেশ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। লঙ্ঘন বাংলাদেশ ওয়াটার অ্যাক্ট ২০১৩ অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ।
এই আদেশ হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা মানার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
