Wednesday, July 9, 2025
Homeজাতীয়সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট শুরু, ছয় দফা দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ

সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট শুরু, ছয় দফা দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ

ছয় দফা দাবিতে রাস্তায় যানবাহন নেই, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সিলেট জেলায় শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। ছয় দফা দাবিতে এ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও একাধিক নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:

১. সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের অপসারণ
২. সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৩৬ ধারার অধীনে বাস-মিনিবাসের ২০ বছর, ট্রাক-পিকআপের ২৫ বছর, সিএনজি-লেগুনার ১৫ বছরের ‘আর্থিক আয়ুষ্কাল’ নির্ধারণ বাতিল
৩. সিলেটে সকল পাথর কোয়ারি লিজ বাতিল এবং ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থায় পুনরায় চালু
৪. বিআরটিএর মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ফিটনেস সনদ প্রদানের দায়িত্ব বাতিল এবং পরিবহন খাতে বাড়তি কর প্রত্যাহার
৫. পাথর ক্রাশার মিলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বন্ধ করা, মিটার ফেরত দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান
৬. যানবাহনে আটককৃত পাথর ও বালুর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি

ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। শহরের জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড় ও মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করলেও কোনো যানবাহন মেলেনি। সীমিত পরিসরে কিছু সিএনজি ও শহর এলাকায় ছোট যানবাহন চললেও চাহিদার তুলনায় তা ছিল অত্যন্ত কম।

অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে রেলস্টেশনে ছুটেছেন। তবে টিকিট না পাওয়ায় সেখানেও হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। যাত্রী আনোয়ার হোসেন জানান, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো বাস না থাকায় ট্রেন ধরতে এসেও ব্যর্থ হয়েছেন।

পরিবহন নেতারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার-সমর্থিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের চাপে সিলেট অঞ্চলে পাথরভিত্তিক ব্যবসা ও শ্রমিকদের জীবিকা আজ হুমকির মুখে। ২০১৮ সাল থেকে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এখন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তারা আরও জানান, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৩৬ ধারা মালিক-শ্রমিকদের ধ্বংসের নীলনকশা এবং বেসরকারি সংস্থার হাতে ফিটনেস সনদ প্রদানের কার্যক্রম হয়রানির নতুন কৌশল। এসব ইস্যুতে বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও প্রশাসন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি।

অবশেষে, সকল প্রকার গণপরিবহন, মালবাহী পরিবহন ও পাথরভিত্তিক শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলো একত্র হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।

পরিবহন নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। এর ফলে সিলেট জেলাজুড়ে জনভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • সিলেট

RELATED NEWS

Latest News