বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার ষোড়শ সংশোধনীকে ‘স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রয়াস’ হিসেবে অভিহিত করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়, যা বিচারপতির অসক্ষমতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অপসারণের একমাত্র সংবিধানিক প্রক্রিয়া।
মূল রায়টি ঘোষণা করা হয় ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ওই দিন রায় দেন এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ আবেদন “পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি” ঘোষণা করেন।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর রায়ে বলা হয়, “একটি স্বৈরাচারী সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিল, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে। কোনো বিচারপতি সরকারের অপছন্দনীয় হলে, সংসদের সদস্যদের কলমের এক ঘষায় তাকে সরিয়ে দেওয়া যেত। এটা কি গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য?”
তিনি আরও বলেন, “আমার এবং আমার সহবিচারকদের মতে, উত্তরটি হলো একটি শক্তিশালী ‘না’। এমন পরিস্থিতি কখনোই গণতন্ত্রে অনুমোদনযোগ্য নয়।”
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, কোনো বিচারপতি রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে মত দিলে সেটি তার নিরপেক্ষতা ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিচারপতিদের উদ্দেশে রায়ে বলা হয়, “তাদের উচিত রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ না নেওয়া এবং ব্যক্তিগত মতাদর্শ থেকে বিরত থাকা, যা বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
এ রায়কে ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য এক মাইলফলক’ আখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এই আদেশ ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আশা করি, তারা মাথা উঁচু করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।”
তিনি জানান, রিভিউ আবেদনে ৯৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হলেও আদালত সবগুলো পর্যালোচনা করে একটিও যথাযথ বলে মনে করেনি।
এই মামলায় রিটকারী হিসেবে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরসেদ এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ উচ্চ আদালতের রায় বহাল রেখে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর আগে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংশোধনীটি বাতিল করে রায় দেন।