যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিভক্ত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ডিওজি (ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি) সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের (এসএসএ) কোটি আমেরিকান নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেসের অনুমতি পেয়েছে। শুক্রবার (৬ জুন) এই আদেশের মাধ্যমে আদালত সরকারের করা জরুরি আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে।
একইসঙ্গে আরেক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ডিওজি’কে সরকারি নজরদারি গ্রুপের কাছে অবিলম্বে নথিপত্র প্রকাশ করতে বাধ্য হওয়ার নির্দেশও স্থগিত করেছে।
আদালতের তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি এই দুটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
এই রায়গুলোর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা তুলতে সুপ্রিম কোর্টের সহায়তার আরও একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হলো। এর আগেও আদালত প্রশাসনকে ট্রান্সজেন্ডার সেনা সদস্যদের নিষিদ্ধ করা, স্বাধীন সংস্থা প্রধানদের বরখাস্ত, শিক্ষক অনুদান স্থগিত এবং অভিবাসী সুরক্ষার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে অনুমোদন দিয়েছিল।
ডিওজি’র এই ডেটা সংগ্রহ কার্যক্রম মূলত সরকারের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের অপব্যবহার ও প্রতারণা খুঁজে বের করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গঠিত একটি বিশেষ সংস্থা, যার প্রাথমিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এলন মাস্ক।
ডিওজি’র বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের তথ্য সংগ্রহের বৈধতা এবং এলন মাস্কের প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
দুটি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং একটি অধিকার সংগঠন ডিওজি’র এসএসএ ডেটা অ্যাক্সেস ঠেকাতে আদালতে যান। তাদের বক্তব্য, এ ধরনের অ্যাক্সেস কর্মীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সুরক্ষার ঝুঁকি বাড়ায় এবং অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে ভাতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি করে।
মার্কিন ফেডারেল প্রাইভেসি অ্যাক্ট অনুসারে, শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কর্মীরা সংবেদনশীল তথ্য দেখতে পারেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডিওজি’র তথ্য অ্যাক্সেস নিয়ে বিরোধের জেরে এসএসএ’র ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মিশেল কিং পদত্যাগ করেন।
এরপর মার্চ মাসে জেলা বিচারক এলেন লিপটন হোল্যান্ডার ডিওজি’র তথ্য অ্যাক্সেস অস্থায়ীভাবে স্থগিত করেন। তিনি বলেন, “ডিওজি কার্যত একটি অনুমানভিত্তিক প্রতারণা অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করছে।”
তবে আদালতের আদেশে কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট রেডাক্টেড বা বেনামি তথ্য অ্যাক্সেসের অনুমতি রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল ডি. জন সাওয়ার বলেন, “সরকারি দুর্নীতি ও অপচয় রোধে ডিওজি’র জরুরি প্রয়োজন রয়েছে সরকারের তথ্য বিশ্লেষণের।”
অন্যদিকে নাগরিক অধিকার সংস্থা ‘ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ড’ বলছে, এই রায়ে হস্তক্ষেপের কোনো জরুরি পরিস্থিতি নেই। তারা মনে করেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় নীতিমালার থেকে বড় ধরনের বিচ্যুতি।
একইদিনে আরেক মামলায় ডিওজি’র প্রশাসককে সরকারি তথ্য অধিকার আইনের (FOIA) আওতায় তথ্য দিতে নিম্ন আদালতের আদেশও সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। আদালত বলেছে, নির্বাহী শাখার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে বিচার বিভাগীয় সংযম প্রয়োজন।
এই মামলায় নাগরিকদের অধিকার সংস্থা ‘সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিক্স ইন ওয়াশিংটন’ (CREW) ডিওজি’র অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম জানতে তথ্য চেয়ে মামলা করে। প্রশাসন দাবি করে, ডিওজি একটি প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাডভাইজরি বোর্ড হওয়ায় FOIA আইনের আওতায় নয়।
সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতকে রায়ের আওতা সীমিত করতে নির্দেশ দিয়েছে।