সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সুপারম্যান মানেই উত্তেজনা আর ভরসার এক নাম। তবে পরিচালক জেমস গান-এর নতুন সুপারম্যান সিনেমার শেষাংশ নিয়ে এবার শুরু হয়েছে বিতর্ক।
২০১৭ সালের ওয়ান্ডার উইম্যান ছবির কথা মনে আছে? প্রথমে গল্পটা আবেগে ভরপুর ছিল। ডায়ানা প্রিন্স বুঝেছিল যুদ্ধ সৃষ্টি করে না কোনো দেবতা, বরং দোষটা মানুষের। এমন এক আবেগঘন মুহূর্তেই, হঠাৎ করেই চলে আসে বিশাল সিজিআই রূপী আগুনদানব, যাকে বলে ‘অ্যারিস’। এরপর শুরু হয় ধ্বংস আর যুদ্ধের চেনা দৃশ্য। দর্শক বলেছিলেন, সিনেমাটা ভালোই চলছিল — তারপরই সব নষ্ট হল।
এবার একই দৃশ্যপট সুপারম্যানেও দেখা গেল। সিনেমাটি শুরু থেকেই উষ্ণ, রোমাঞ্চকর এবং মজার ছিল। ডেভিড কোরেনসওয়েট ও র্যাচেল ব্রসনাহানের অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু তৃতীয়াংশে গিয়ে সিনেমাটি আবারও পরিণত হয় অতি পরিচিত সিজিআই ধ্বংসযজ্ঞে। সুপারম্যানকে বারবার ঘুষি খেতে দেখা যায়, আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়ে (যদিও বলা হয় সবাই নাকি নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল), আর এক মহাজাগতিক পোর্টাল বন্ধ করতে হয় — এইসব দৃশ্য দেখে অনেকেই বলছেন, “সিনেমাটা ভালোই চলছিল, তারপর…”
সমস্যাটা হচ্ছে, এটি যেন একমাত্র পথ হয়ে উঠেছে সুপারহিরো সিনেমা শেষ করার। মার্ভেল এবং ডিসি উভয়েই বারবার একই প্যাটার্নে শেষ করছে সিনেমা। অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম-এ যখন মহাকাব্যিক যুদ্ধ আমরা দেখেছি, তখন মনে হয়েছিল কেউ হয়তো নতুন কিছু করবে। কিন্তু সেটা আর হয়নি।
এক সময় জেমস গান নিজেই বলেছিলেন, “সুপারহিরো গল্পে অনেকে অলস হয়ে গিয়েছে। অনেক বেফাঁস অ্যাকশন দেখা যায়, যার কোনো যুক্তি থাকে না।” অথচ এবার তার নিজের সিনেমাতেই আমরা একই দৃশ্য দেখছি।
অনেক দর্শক প্রশ্ন তুলছেন, “এই ধরনের সিনেমার শেষাংশ কি একমাত্র বিশাল সিজিআই যুদ্ধেই শেষ হতে হবে?” অথচ ইতিহাস বলছে, সফল সিনেমাগুলোর অনেকেই অন্যভাবে শেষ হয়েছে। দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক, ক্যাসিনো রয়্যাল বা দ্য ডার্ক নাইট-এর মতো ক্লাসিকগুলো তাদের সমাপ্তিতে ভিন্নতা এনেছিল। তারা প্রমাণ করেছিল, বড় কিছু দেখাতে গেলে সবসময় ভবন ধ্বংস করতে হয় না।
সুপারম্যানের নতুন সিনেমার শেষাংশে কিছুটা সংযম দেখিয়েছেন গান। তবুও, যখন একটার পর একটা চরিত্র আর এলিমেন্ট যুক্ত হতে থাকে, তখন গল্পের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। দর্শক বুঝতে পারেন, এ অংশটা শুধু চোখ ধাঁধানোর জন্যই তৈরি। অথচ এই সিনেমার সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য ছিল ক্লার্ক ও লোইসের একটি সাধারণ আলাপচারিতা, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়েছিল — সেটাই প্রমাণ করে গল্পের শক্তি কোথায়।
সিনেমা নির্মাতাদের প্রতি পরামর্শ, শেষ দৃশ্য পরিকল্পনার সময় আয়নায় তাকান। ভাবুন, “আমাকে কি সত্যিই যতটা সম্ভব সিজিআই ঢেলে দিতে হবে?” গল্পের সৌন্দর্য সেখানেই, যেখানে কম দিয়ে বেশি বলা যায়। সুপারম্যানের মত আইকনিক চরিত্রের জন্য সেটাই প্রযোজ্য হওয়া উচিত।