ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : বিশ্ব আজ এক নীরব যুদ্ধের মুখোমুখি, যার ময়দান সাইবার জগত। মিসাইল নয়, ক্লিকেই হামলা হচ্ছে। লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য, অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। এই যুদ্ধ এখন আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, বরং আমাদের বর্তমান বাস্তবতা।
পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, চীন ও রাশিয়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে। এই অভিযোগ চীন ও রাশিয়া সরাসরি অস্বীকার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সার্ভার হ্যাকের অভিযোগে সম্প্রতি চীনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। প্রাগে চীনা দূতাবাস এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশটির সরকারি সংস্থার ওপর সংঘটিত সাইবার হামলার ৮০ শতাংশই চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, “আজ আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হচ্ছি।”
ব্রিটেনও এই সাইবার যুদ্ধের জবাবে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। দেশটি এক বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে ‘সাইবার ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কমান্ড’ গঠনের জন্য, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত টার্গেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম।
এই অবস্থায় রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এসেছে। মস্কো এই অভিযোগকে ‘অবাস্তব’ বলে অভিহিত করেছে। বেইজিং বলছে, এই অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। আর পিয়ংইয়ং এখনো নীরব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে প্রতিটি দেশ সাইবার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবিষ্যতের যেকোনো হামলা শুধু গোপন তথ্যই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে বিলিয়ন ডলারের বাজেট বরাদ্দ করেছে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে। তবে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে হুমকির মাত্রাও বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন যেকোনো সাইবার হামলা শুধু তথ্য চুরি নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক কিংবা হাসপাতাল পর্যন্ত বিপর্যস্ত করতে পারে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনীতিও ক্রমে সাইবার নিরাপত্তা নির্ভর হয়ে উঠছে।
বিশ্বের সামনে এখন বড় প্রশ্ন, এই সাইবার যুদ্ধ থামাতে সম্মিলিত পদক্ষেপ কবে ও কিভাবে নেওয়া হবে। কারণ, একবার আঘাত হলে ক্ষতির মাত্রা হতে পারে অপরিসীম।