অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণআন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইসিটি।
সোমবার ১৭ নভেম্বর আইসিটি ১ এর তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং মোহিতুল হক এনায়েত চৌধুরী।
চারস্তর নিরাপত্তার মাঝে গাদাগাদি মানুষের উপস্থিতিতে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ আদালতে পড়ে শোনানো হয়। রায়টি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও আইসিটি প্রসিকিউটর কার্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
রায়ে শেখ হাসিনা, কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ২০২৪ সালের রক্তাক্ত দমন অভিযানের জন্য দায়ী করা হয়। তবে মামুন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী বা অ্যাপ্রুভার হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পান এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
শেখ হাসিনা ও কামাল আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমির হোসেন রায়ের সমালোচনা করে বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি’। তিনি জানান, হাসিনা আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার ছাড়া আপিল করতে পারবেন না।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেরত আসতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গত বছর ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যান। ভারত থেকে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।
শেখ হাসিনা ও কামালকে চাকরপুর, আশুলিয়া ও সাভারে ছাত্র-যুবকদের হত্যাকাণ্ডে উসকানি ও নির্দেশ প্রদান এবং হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ও ব্যাপক হামলার দায়ে তাদের ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত’ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সশস্ত্র দলীয় সদস্যদের ওপর “কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল” প্রয়োগ করেন।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করবে না ভারত, প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই ‘ফাঁক’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকেও অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা এবং সহায়তার কারণে দায়ী বলা হয়।
ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা ২০২৪ সালে নিহত ও আহতদের পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এটি বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে নজিরবিহীন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিনগুলোতে সহিংসতায় নিহত হয় এক হাজার চারশর বেশি মানুষ।
মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ১৪ আগস্ট। চার্জশিট দাখিল হয় ১ জুন। ৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন।
১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয় এবং ১৭ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার রায়কে “ঐতিহাসিক” হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, কেউ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। তারা ভারতকে শেখ হাসিনা ও কামালকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণের আহ্বান জানিয়েছে।
