ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজে শুক্রবার ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বিশ্ব। রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্য দিয়ে দুই দশকের সংঘর্ষ ও সহিংসতার অবসানের ইঙ্গিত মিলেছে। চুক্তিটি এমন সময় স্বাক্ষরিত হলো, যখন পূর্ব কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল বারবার বিদ্রোহী হামলার শিকার হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নিজেই এই চুক্তিকে তার প্রশাসনের এক কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন, বলেন, “আজ সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটেছে। এই অঞ্চল নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল। এটি একটি দুর্দান্ত দিন।”
চুক্তি অনুযায়ী, রুয়ান্ডা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সীমিত করবে এবং কঙ্গোতে সক্রিয় ‘ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অব রুয়ান্ডা (FDLR)’ বিদ্রোহীদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হবে। রুয়ান্ডা দীর্ঘদিন ধরেই FDLR-এর কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল, যারা ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হুতু গোষ্ঠীর সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে।
রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ে নডুহুনগিরেহে বলেন, “আমরা চাই এই হুতু মিলিশিয়াদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সমর্থনের চূড়ান্ত ও যাচাইকৃত অবসান ঘটুক। এটি হবে প্রথম পদক্ষেপ।”
কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কায়িকওয়াম্বা ওয়াগনার বলেন, “এই চুক্তি শুধু কথায় নয়, বাস্তব পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করে। কিছু ক্ষত হয়ত সারবে, তবে সবসময়ই দাগ রয়ে যাবে।”
চুক্তির আওতায় একটি যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে এবং তিন মাসের মধ্যে একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির কাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
তবে শান্তিচুক্তি ঘিরে উদ্বেগও রয়েছে। ২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েগে চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটি মূলত আগ্রাসনের পুরস্কারস্বরূপ। কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের বৈধতা দেয় এবং ন্যায়বিচার বিসর্জন দিয়ে এক ধরনের অস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতিসংঘও। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই চুক্তি পূর্ব কঙ্গো ও গ্রেট লেক অঞ্চল শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
এদিকে, চুক্তি স্বাক্ষরের দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গো থেকে “অনেক খনিজ অধিকার” পাবে। আফ্রিকার এই অঞ্চলটি লিথিয়াম ও কোবাল্টের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজে ভরপুর, যেখানে এর আগে চীন সক্রিয় ছিল।
ট্রাম্প বলেন, “আমি এ বিষয়ে খুব বেশি জানতাম না। একটাই জানতাম — ওরা বহু বছর ধরে একে অপরকে কেটেছে।”
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই চুক্তিটি আশা ও সংশয়ের মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। শান্তির পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হলেও, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।