একটি ব্রিটিশ নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাশিয়া চালু ও খসড়া ধরনের নথি চীনে এমন সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরবরাহের ইঙ্গিত দেয় যা বেইজিংকে উচ্চ-উচ্চতা প্যারাশুট অবতরণ এবং জলদলভিত্তিক আক্রমণ সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। লন্ডনভিত্তিক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট বা RUSI তাদের বিশ্লেষণটি হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ব্ল্যাক মুনের দ্বারা প্রকাশিত প্রায় ৮০০ পাতার নথির ওপর নির্ভর করে করেছে।
RUSI বলেছে যে দলিলগুলোর মধ্যে রয়েছে মস্কো-মিউটেডিত বৈঠকের মিনিটস, সরঞ্জামের তালিকা এবং অর্থপ্রদানের ও সরবরাহের সময়রেখা। সেই তালিকায় উচ্চ-উচ্চতা প্যারাশুট সিস্টেম, ৩৭টি হালকা জলদল আক্রমণ যানবাহর, ১১টি জলদল-বিরোধী স্বচালিত যানবাহর ও ১১টি এয়ারবর্ন আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ারের মতো আইটেম দেখা যায়। মোট খরচ এক দস্তাবেজে ২১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হিসেবে উল্লেখ আছে। দলিলগুলোতে বলা হয়েছে এসব যানবাহর চীনা যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চীনা গোলাবারুদ ব্যবহারের জন্য সজ্জিত করার কথাও রয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, নথি সরাসরি প্রকাশ করে যে চীন ইতোমধ্যেই টাকা দিয়েছে বা সরঞ্জাম পেয়েছে তা বলছে না। আরপসি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব সরঞ্জাম সেভাবে ডেভেলপ করলে তাইওয়ান বিপরীত সৈন্যাবাহিনী অভিযান চালানোর জন্য কার্যকর হতে পারে। RUSI রিপোর্টারের উদ্ধৃত বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ-উচ্চতা প্যারাশুট সিস্টেম যদি কাজ করে, তা বলিষ্ঠভাবে ৮০০০ মিটার পর্যন্ত ড্রপ করে এবং সেখান থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গ্লাইডিং সম্ভব করে তুলতে পারে। এ ধরনের সক্ষমতা বিশেষ বাহিনীকে আরোপের আগে গোপনভাবে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
রিপোর্টটি রাশিয়ার ক্রেমলিন এবং চীনের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রত্যক্ষ মন্তব্যের জন্য পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারা অবিলম্বে কোনো মন্তব্য করেনি। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা দলিলগুলোর সত্যতা আদৌ পুরোপুরি যাচাই করা যায়নি বলে স্বীকার করেছেন এবং কিছু অংশ কাটা বা পরিবর্তিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, রাশিয়া নিজেই ইউক্রেনে এ ধরনের এয়ারবর্ন অপারেশন সফলভাবে চালাতে পারেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভের কাছে হোস্টোমেলের অভিযান ব্যর্থ হওয়ার নজির আছে। তবু RUSI-র বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার বহু বছরে সঞ্চিত এয়ারবর্ন জ্ঞান চীনা বাহিনীকে নীতি, প্রশিক্ষণ ও চালু ব্যবস্থায় সহায়তা করতে পারে, যা চীনের এয়ারবর্ন প্রোগ্রামকে ১০ থেকে ১৫ বছর ত্বরান্বিত করতে পারে বলে এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন।
রাশিয়ার নীতিসমর্থক হিসেবে রিপোর্টটি আরেকটি দিকও তুলে ধরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কোর লক্ষ্য হবে একদিকে নিজেদের অস্ত্র রফতানি বৃদ্ধি করে ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থানুকূলে সহায়তা করা, অন্যদিকে বেইজিংকে এমন সক্ষমতা দেওয়া যা জোটের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রাখতে পারে।
নথি অনুযায়ী ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয় এবং ২০২৪ সালের শেষের দিকে প্রযুক্তি সম্পর্কিত ডেটা সরবরাহ করা হবে এমন সময়রেখা ছিল। দস্তাবেজগুলোয়ে কিভাবে ডালনোলোইট নামে একটি সিস্টেম শীতল ও বাস্তবগত তাপমাত্রায় পরীক্ষিত হবে তার উল্লেখও আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন সরঞ্জাম পেলে চীন সম্ভবত হঠাৎ করে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাহত করে এবং নির্দিষ্ট পয়েন্টে আঘাত হানার জন্য এয়ারড্রপের মাধ্যমে যুদ্ধজাহাজ বা পতিত হ’ল এমন কৌশল প্রয়োগ করতে পারে। তবে প্রতিবেদকরা সতর্ক করে বলেছেন, যে কোনো আক্রমণের বাস্তবতা নির্ভর করবে চীনের কৌশল, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এই বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক মন্দিরে তৎপরতা এবং আইনি, কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। প্রকাশিত দলিলগুলোর ভিত্তিতে করে হওয়া এই বিশ্লেষণে সুস্পষ্ট সতর্কতা থাকে যে সব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি এবং নথিগুলোতে কিছু অংশ অনুপস্থিত বা পরিবর্তিত থাকতে পারে।