রাশিয়ার সরকার বাজেট ঘাটতি কমাতে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বর্তমানে ভ্যাটের হার ২০ শতাংশ, যা বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে কর বাড়ানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সংসদে খসড়া বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেটের মূল দিকগুলো আগে থেকেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়, ফলে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছরে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত আয়কর ও করপোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। তারপরও চলতি বছরের মে মাসে বাজেট ঘাটতির পূর্বাভাস তিন গুণ বাড়িয়ে জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করতে হয়। এ ঘাটতি আরও বাড়তে পারে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ভ্যাট বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি অর্ধেক পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ভ্যাট বর্তমানে রাশিয়ার মোট বাজেট আয়ের প্রায় ৩৭ শতাংশ জোগান দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক খাতে বড় ধরনের ব্যয় কমানো সম্ভব নয়। তাই রাজস্ব বাড়ানোর একমাত্র উপায় কর বৃদ্ধি। এক সূত্র বলেছেন, “কাটছাঁট করে ঘাটতি কমানো সম্ভব নয়। সামরিক ব্যয় কমানো যাবে না, আর সামাজিক খাতে সামান্য কাটছাঁট বড় কাজে আসবে না।”
রাশিয়ার অর্থনীতি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গত বছর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে এ বছর প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় ১ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।
অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ জানিয়েছেন, বাজেট নিয়ম অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ তেলের দাম ৬০ ডলার প্রতি ব্যারেলের বেশি হলে সেই অতিরিক্ত আয় রিজার্ভ ফান্ডে জমা হবে। বর্তমানে সেই ফান্ডে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন রুবল তরল সম্পদ রয়েছে। চলতি বছর সরকার এ ফান্ড থেকে ৪৪৭ বিলিয়ন রুবল ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা সতর্কভাবে কর বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁর মতে, বাজেট ঘাটতি বাড়ানোর চেয়ে রাজস্ব বাড়ানো ভালো। ঘাটতির আকারই সুদের হার কমানোর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। বর্তমানে দেশটির নীতি সুদের হার ১৭ শতাংশ, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, নতুন ঋণ নেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ রাশিয়ার ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। তবে সরকারি ঋণের সুদের হারই প্রায় ১৩ শতাংশ, আর ২০২৫ সালে সুদ বাবদ ব্যয় জিডিপির প্রায় ২ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাট বাড়ালে মুদ্রাস্ফীতিতে কিছুটা চাপ পড়বে। ২০১৯ সালে ভ্যাট বাড়ানোর পর মুদ্রাস্ফীতি ০ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর বৃদ্ধির সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।