রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের গভীর জঙ্গলে বৃহস্পতিবার সোভিয়েত আমলের একটি এন্তোনোভ-২৪ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানে থাকা ৪৯ জন যাত্রীর সবাই নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু এবং ছয়জন ক্রু সদস্য ছিলেন বলে রুশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
দুর্ঘটনার খবর প্রকাশের পর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল বড় ধরনের প্রাণহানির। কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে, দুর্ঘটনায় কেউ জীবিত নেই।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বৃহস্পতিবার এক সরকারি বৈঠকের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
১৯৭৬ সালে নির্মিত এই এন্তোনোভ-২৪ মডেলের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পুরনো সোভিয়েত যুগের বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই মডেলের বিমান এখনও বিশ্বের কয়েকটি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়ান একটি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া, কাজাখস্তান, লাওস, কিউবা, ইথিওপিয়া, মিয়ানমার এবং জিম্বাবুয়ে এখনও এই বিমান চালনা করছে।
রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরনো সোভিয়েত বিমান থেকে আধুনিক জেটে রূপান্তর ঘটাতে চাইলেও ইউক্রেন আগ্রাসনের জেরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহে জটিলতায় পড়েছে। ফলে পুরনো হালকা ও মাঝারি বিমানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলে।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি সম্প্রতি একটি কারিগরি নিরাপত্তা পরিদর্শনেও উত্তীর্ণ হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলো। ২০১৮ সাল থেকে বিমানটি চারবার ‘তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো’ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর রাশিয়ান তদন্তকারী সংস্থা বিমান চলাচল ও পরিবহন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। তাদের প্রাথমিক ধারণা, গাফিলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে যা দুই বা ততোধিক মানুষের প্রাণহানির জন্য দায়ী।
এই দুর্ঘটনা শুধু রাশিয়াতেই নয়, অন্যান্য দেশেও পুরনো বিমান ব্যবস্থাপনার ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিমান নিরাপত্তা এবং নীতিগত আধুনিকীকরণ এখন হয়ে উঠেছে সময়ের দাবি।