ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান সংঘাত নিরসনে রাশিয়ার অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। হাঙ্গেরির দৈনিক Magyar Nemzet-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কেবল টেকসই ও স্থায়ী শান্তির ভিত্তিতেই রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব, সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে রাশিয়ার আগ্রহ নেই।
ল্যাভরভ বলেন, “কিয়েভ ও তার বিদেশি মিত্ররা অস্ত্রবিরতির সুযোগ নিয়ে নতুন করে সেনা সংগঠিত করতে চাইবে, যা যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। আমরা এমন কোনো সমাধান চাই না।”
তিনি জানান, সংঘাতের মূল কারণ হলো ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টার মাধ্যমে রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকিতে পড়া।
শান্তিচুক্তির জন্য রাশিয়ার প্রস্তাবিত শর্তের মধ্যে রয়েছে—ক্রিমিয়া, সেভাস্তোপোল, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং রাশিয়ার বিদেশি সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া।
ল্যাভরভ আরও বলেন, রাশিয়া কখনো ইউরোপ দখলের পরিকল্পনা করেনি। বরং পশ্চিমা দেশগুলো গণমাধ্যম ব্যবহার করে “রাশিয়াকে হুমকি” হিসেবে উপস্থাপন করছে যাতে তারা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে পারে।
তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষাভাষী জনগণের নিপীড়নের অভিযোগ এনে বলেন, “২০১৪ সালের কিয়েভের অভ্যুত্থানের পর থেকেই রাশিয়ান ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রুশভাষীসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।”
এছাড়া, রাশিয়া ও হাঙ্গেরির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, “হাঙ্গেরি ন্যাটোর চাপের মধ্যেও ভারসাম্যপূর্ণ নীতিতে অটল রয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।”
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউরোপ দখলের পরিকল্পনা করছেন। এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে ল্যাভরভ বলেন, “এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে ইউরোপীয় সমাজে ভয় ছড়াতে ও রাশিয়া-ভীতি বাড়াতে। মূলত তারা নিজেদের সমস্যার দিক থেকে জনমত ঘোরাতে চায়।”
রাশিয়ার দাবি, ২০১৪ সাল থেকে দোনবাসে রুশভাষী জনগণের ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনী ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেছে। এসব ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ল্যাভরভ।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘ সনদের আলোকে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। পশ্চিমারা এই সনদ selectively ব্যবহার করছে, যা দ্বিমুখী নীতির পরিচয় দেয়।”
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই দাবিগুলোর উপর কতটুকু আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া যায় এবং কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা কতটুকু নমনীয়তা দেখায় তার ওপর। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ল্যাভরভের এই বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।