Friday, July 11, 2025
Homeআন্তর্জাতিকইউক্রেনে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পোল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল লক্ষ্যবস্তু

ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পোল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল লক্ষ্যবস্তু

৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি রাশিয়ার, ৭১১টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া নতুন মাত্রা যোগ করেছে সর্ববৃহৎ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে। এই হামলাকে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।

রাশিয়া জানিয়েছে, তারা মোট ৭২৮টি ড্রোন এবং ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের পোল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা লুতস্ক অঞ্চলের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৭১১টি ড্রোন এবং ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।

রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণের শব্দ ও ড্রোনের গুঞ্জন শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন এএফপির সংবাদকর্মীরা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলা প্রমাণ করে রাশিয়া এখনো শান্তি আলোচনার সব প্রয়াস প্রত্যাখ্যান করছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি খাতসহ অর্থনৈতিক উৎসগুলোতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার।

জেলেনস্কি আরও দাবি করেন, চীন রাশিয়াকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করছে এবং এর বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, তারা দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে যারা ইউক্রেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পাচারের চেষ্টা করছিলেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা “নির্ভুল” আঘাতে সব নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে। তবে ইউক্রেন এই দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

রুশ হামলার পর লুতস্ক শহরের মেয়র জানিয়েছেন, একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই হামলার কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নতুন করে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। জেলেনস্কির প্রধান সহযোগী আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, “এই আক্রমণটি এমন সময়ে হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অস্ত্র সরবরাহ পুনরায় চালু করেছে।”

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নতুন ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করেছে।

এদিকে ক্রেমলিন জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নয়।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “ট্রাম্প সব সময় কড়া ভাষা ব্যবহার করেন, এটা তার রাজনৈতিক রীতি।”

ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর দুই দফা রাশিয়া–ইউক্রেন প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা হলেও কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। তবে বন্দি বিনিময়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে।

রাশিয়া বারবার বলছে, কূটনৈতিকভাবে এই যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাবনা তারা দেখছে না। বরং ইউক্রেনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে মস্কো।

একইসাথে ইউক্রেনও রাশিয়ার ওপর পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া দাবি করেছে, বুধবার তাদের পশ্চিমাঞ্চলে ইউক্রেনের ৮৬টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।

পুরো যুদ্ধের মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেস্ক অঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। বুধবার তারা তলস্তয় নামক আরেকটি গ্রাম দখলের দাবি করেছে।

দোনেস্ক অঞ্চল ২০২২ সাল থেকে রাশিয়া নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে, যদিও এখনো তারা পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং এর পরিণতি ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

RELATED NEWS

Latest News