Sunday, August 10, 2025
Homeজাতীয়কক্সবাজারে আরও ১.৫ লাখ রোহিঙ্গা, সংকট ঘনীভূত মানবিক সহায়তার

কক্সবাজারে আরও ১.৫ লাখ রোহিঙ্গা, সংকট ঘনীভূত মানবিক সহায়তার

গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী, সহায়তা বন্ধ হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য ঝুঁকিতে

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, গত ১৮ মাসে কক্সবাজারে আরও এক লাখ পঞ্চাশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা এবং মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে এই শরণার্থীদের নতুন করে বাংলাদেশে আসার প্রবণতা বেড়েছে।

শুক্রবার ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি ২০১৭ সালের পর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী প্রবাহ। ওই সময়ে প্রায় ৭.৫ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।

বর্তমানে কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা ২৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার জনকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শনাক্ত করা হয়েছে, যদিও ধারণা করা হচ্ছে অনেকেই আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প ছাড়া অন্যত্র অবস্থান করছে।

নতুন শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তারা অনেকাংশেই পূর্বে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্ভরশীল, ফলে সীমিত রসদের ওপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও জরুরি সামগ্রী সরবরাহ করা হলেও অর্থ সংকটে এই সহায়তা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানায়, তহবিল না বাড়লে আগামী সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে, রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ডিসেম্বরে এসে বন্ধ হতে পারে খাদ্য সহায়তা। এর ফলে ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, যার মধ্যে নতুন আসা ৬৩ হাজার শিশুও রয়েছে।

ইতোমধ্যে সহায়তা কমে যাওয়ায় শরণার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনের খোঁজে বিপজ্জনক সমুদ্রপথে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। তবুও বাংলাদেশ সরকার নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা ও সেবা গ্রহণে অনুমতি দিয়েছে বলে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।

তবে সংস্থাটি বলছে, সহিংসতা অব্যাহত থাকায় পালিয়ে আসা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয় ও আশ্রয়প্রার্থিতার সুযোগ দেওয়ার বিষয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের উদারতা ও আন্তর্জাতিক সহায়তা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক অর্থ সংকটে প্রায় প্রতিটি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হুমকির মুখে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি অর্থ সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়েছে।

তারা বলেছে, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখা না গেলে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা চরম ঝুঁকিতে পড়বে।

RELATED NEWS

Latest News