মিয়ানমারের জাতিগত সহিংসতা থেকে পালিয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মানবিক সংকট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে এক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি এই পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের মাউং সাওয়েডোল্লাহ দেখান একটি ছবি, যেখানে সাধারণ পোশাকের নারী ও শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরাকান আর্মির ড্রোন আক্রমণে এই নিহতরা মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, “এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি নিয়মিত কর্মকাণ্ডের অংশ। রোহিঙ্গাদের ন্যায় কোথায়?”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, যা রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে তীব্র সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু। মহিলা শান্তি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াই ওয়াই নু জানিয়েছেন, সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক নিয়োগ, নির্যাতন ও যৌন সহিংসতা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, “রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি অনন্য। তারা দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্য, অধিকারবঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। একই সঙ্গে তারা দেশটির অন্যান্য জাতিগত সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েছে।”
বাংলাদেশে থাকা ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ার প্রভাবের মুখোমুখি। কক্সবাজারে ছয় বছর থাকা লাকি করিম বলেন, “আমরা বিপজ্জনক ও অতিভিড়পূর্ণ শিবিরে কঠোর জীবনযাপন করেছি। বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ। আমাদের লক্ষ্য নিরাপদে মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া, কিন্তু কীভাবে পৌঁছাব তা প্রশ্নবিদ্ধ।”
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিশেষ দূত জুলি বিসপ সতর্ক করেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য এক অপরাজেয় বাধা সৃষ্টি করছে। রাখাইন রাজ্যের মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতি নভেম্বর ২০২৩ থেকে ক্রমেই খারাপ হয়েছে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই রাজ্য একটি গৃহযুদ্ধের অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের জীবন বিপন্ন করছে।