“যেখান থেকে গোল করার কোনও সুযোগই ছিল না, সেখান থেকেই গোল করে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল রিতু,”—এই কথাগুলো বলছিলেন তাঁর প্রথম কোচ শান্তিমণি চাকমা।
সেই রিতু পর্না চাকমাই এখন ইতিহাস গড়েছেন জাতীয় দলের হয়ে। বুধবার মিয়ানমারের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি গোল করে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে তুলেছেন এই তরুণী।
২-১ গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, এবং এই জয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রাঙামাটির পাহাড়ি কন্যা রিতু।
ছোটবেলা থেকেই বড় মঞ্চে নিজের জাত চিনিয়ে আসছেন রিতু। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়েই শান্তিমণির কোচিংয়ে খেলতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম ট্রেনিংয়ে পায়ের নখ উঠে গিয়েছিল, কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি।
২০১২ সালে চাচা বীর সেন চাকমার মাধ্যমে ফুটবল জগতে আসেন রিতু। এরপর ২০১৫ সালে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। সে বছরই মারা যান তাঁর বাবা। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে খরচ চালানো কঠিন হলেও রিতু থেমে যাননি।
জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পেয়ে শুরু হয় তাঁর পথচলার নতুন অধ্যায়। তারপর একে একে অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং এখন জাতীয় দলে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন তিনি।
২০২২ সালে রিতুর প্রথম সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ, যেই টুর্নামেন্টেই প্রথম শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এবার, ২০২৪ সালে আবারো শিরোপা জয় এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার—সবকিছুর কেন্দ্রে ছিলেন রিতু পর্না।
সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, “বড় ম্যাচ মানেই রিতু। সে বল পেলে আমি জানতাম কিছু একটা হবে।” মিয়ানমারের বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন ফ্রি কিক থেকে ফিরতি বল ধরে নিচু শটে। দ্বিতীয়টি ছিল বাঁ পায়ের দুর্দান্ত কার্লিং শট, এক কোণ থেকে অন্য কোণে বল পাঠিয়ে।
ফিফা র্যাংকিংয়ে ৭৩ ধাপ উপরে থাকা মিয়ানমারকে হারিয়ে বাংলাদেশ দেখিয়েছে তাদের সক্ষমতা। তৃতীয় প্রচেষ্টায় অবশেষে সফল হলো দেশের মেয়েরা।
ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রিতু জানিয়েছিলেন, পাহাড়ের কঠোর পরিশ্রমের সংস্কৃতিই তাঁকে তৈরি করেছে। ছোটবেলায় ঝিরি থেকে পানি বয়ে আনা, খাদ্যের জন্য সংগ্রাম—এসবই গড়েছে তাঁর লড়াকু মনোভাব।
একজন পরিশ্রমী, সাহসী এবং বড় ম্যাচে পারফর্ম করা খেলোয়াড় হিসেবে রিতু পর্না চাকমা এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল তারকা। তাঁর গল্প শুধু একটি খেলার গল্প নয়, এটি এক পাহাড়ি মেয়ের স্বপ্ন পূরণের গল্প।