দেশজুড়ে ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাজারে জমজমাট কেনাকাটা, আর তারই প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। পরিবারের বাড়তি খরচ মেটাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেড়েছে রেমিটেন্স পাঠানোয়। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি টাকারও বেশি। গত বছরের একই সময়ে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ২২৫ কোটি ডলার। এই হিসেবে প্রবৃদ্ধির হার ৩২ শতাংশ।
এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে, ঈদুল ফিতরের আগে, দেশে রেমিটেন্স এসেছিল রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। সেই ধারা বজায় রেখেই এবার ঈদুল আযহা সামনে রেখে এসেছে এ বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষে সাধারণত পশু কেনা, নতুন পোশাক, উপহার, ও অন্যান্য পারিবারিক ব্যয় মেটাতে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠান। এই সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহে বাড়তি গতি লক্ষ্য করা যায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিটেন্স প্রবাহ শুধু পরিবারের আয়ই বাড়ায় না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখে। বিশেষ করে ঈদের সময় গ্রামীণ অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে এ অর্থপ্রবাহ। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে, বাজার চাঙা হয় এবং বেকারত্বও কিছুটা হ্রাস পায়।
সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে বিভিন্ন প্রণোদনা চালু করেছে। বিশেষ করে ডিজিটাল ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সহজলভ্যতা হুন্ডি নিরুৎসাহিত করে বৈধ পথকে জনপ্রিয় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে রেমিটেন্স এসেছে ২৭৫০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ২১৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য আরও সুসংহত হবে। পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগেও এটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
বর্তমান সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে রেমিটেন্স প্রবাহে যে গতি এসেছে, তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।