Tuesday, October 21, 2025
Homeজাতীয়রংপুরের বদরগঞ্জে ভিজিডি কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ

রংপুরের বদরগঞ্জে ভিজিডি কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ

ধনী পরিবারের নারীরা তালিকায়, বঞ্চিত শতাধিক প্রকৃত অসহায় নারী

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় অসহায় ও দরিদ্র নারীদের জন্য সরকারের ভলনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিজিডি) কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ধনী পরিবারের নারীদের তালিকাভুক্ত করা হলেও প্রকৃত অসহায় নারীরা বঞ্চিত হয়েছেন।

কর্মসূচির নিয়ম অনুযায়ী বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, কিংবা রিকশা ও ভ্যানচালকের স্ত্রী যাদের জমি ১৫ শতক বা তার কম, তারাই এ সুবিধার জন্য যোগ্য। বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও উপজেলা—এই তিন স্তরের কমিটি যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করার নিয়ম রয়েছে।

গত ১০ জুলাই উপজেলা প্রশাসন ১০ ইউনিয়নের ৩ হাজার ১৫৫ নারীকে সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। প্রতিজনকে এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। জুলাই ও আগস্টের চাল ইতোমধ্যে বিতরণও করা হয়েছে।

কিন্তু মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে লোহানীপাড়া ও কালুপাড়া ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। অন্তত ৪০টি পরিবার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে একজনও প্রকৃত যোগ্য নারী ভিজিডি কার্ড পাননি। বরং প্রভাবশালী জমির মালিক, ব্যবসায়ী, গ্রামপুলিশের স্ত্রী এমনকি গ্রামের বাইরে বসবাসরত নারীরাও তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কছাবাড়ি হাজীপাড়া গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী খালেদা আখতারকে তালিকায় পাওয়া যায়। আজিজুলের রয়েছে ৫–৬ বিঘা জমি, মোটরসাইকেল ও পাকা বাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনও মিজানুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন। একই ইউনিয়নে আম ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আয়োবি খাতুন ও প্রভাবশালী রাহাদ হোসেনের স্ত্রী হাসি আখতারও তালিকায় আছেন।

কালুপাড়ায় অনিয়ম আরও স্পষ্ট। সেখানে একাধিক সুবিধাভোগীর নাম ও অভিভাবকের পরিচয় মেলেনি বা কাল্পনিক পাওয়া গেছে। “বারিতা রানী দাস” নামে এক কার্ডে অভিভাবক হিসেবে দেখানো হয়েছে “ফলানু দাস”, যিনি বহু বছর আগে মারা গেছেন। আরেক ক্ষেত্রে “শিমু আখতার” নামে চাল তোলা হলেও গ্রামবাসী জানান, তিনি বহু বছর আগে বিয়ে হয়ে গ্রাম ছেড়ে গেছেন। গাইবান্ধায় বসবাসরত রোকসানা খাতুনও বিস্ময় প্রকাশ করেন, তার নামে বদরগঞ্জে কার্ড ইস্যু হয়েছে জেনে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যানরা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক দায়িত্ব এড়িয়ে নারী বিষয়ক কার্যালয়কে দায়ী করেন। অপরদিকে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, তালিকা ওয়ার্ড কমিটি থেকে পাঠানো হলেও উপজেলা পর্যায়ে তা বাতিলের সুযোগ ছিল।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. সাবিকুন্নাহার অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “প্রকৃত অসহায় নারীর পরিবর্তে অনেক স্বচ্ছল নারী তালিকাভুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি কার্ড বিতরণের সময় আমার নজরে আসে। ইতোমধ্যে কয়েকটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি।”

ইউএনও মিজানুর রহমান জানান, অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে অসহায় বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা নারী ও দিনমজুরদের স্ত্রী এখনো বঞ্চিত রয়েছেন, যাদের জন্যই মূলত সরকারের এ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • রংপুর

RELATED NEWS

Latest News