ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির উত্থানের মতোই একটি গল্প। ছয় বছর আগে কাপুর পরিবার তাদের ঐতিহ্যবাহী আরকে স্টুডিও গোদরেজ প্রপার্টিজের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। এখন ২০২৫ সালের শেষের দিকে, রাজ কাপুরের নাতি রণবীর কাপুর তার দাদা প্রতিষ্ঠিত কিংবদন্তি স্টুডিওর ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, রণবীর রাজ কাপুরের কালজয়ী ক্লাসিক আওয়ারা আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্নির্মাণ করবেন। মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি নিজেই, সঙ্গে থাকবেন দীপিকা পাদুকোন। ছবিটি পরিচালনা করার জন্য তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আয়ান মুখার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
আওয়ারা ছিল রাজ কাপুরের প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতা হিসেবে তৃতীয় ছবি। আগ (১৯৪৮) এবং বরসাত (১৯৪৯) এর পর এটি মুক্তি পায়। ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে রাজ কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পর্দা এবং বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণা নার্গিস।
আওয়ারা কাপুর পরিবারের জন্য একটি মাইলফলকও চিহ্নিত করে। ছবিটিতে তিন প্রজন্মকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। দেওয়ান বাশেশ্বরনাথ কাপুর, পৃথ্বীরাজ কাপুর, রাজ কাপুর এবং একজন তরুণ শশী কাপুর।
১৯৫৩ সালে, ছবিটি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গ্র্যান্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল, যা বৈশ্বিক সিনেমা ইতিহাসে এর স্থান সুদৃঢ় করে।
২০১৯ সালে যখন কাপুর পরিবার গোদরেজ প্রপার্টিজের কাছে আরকে স্টুডিও বিক্রি করেছিল, তখন কিংবদন্তি পরিবারের সদস্য ঋষি কাপুর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোন আলাপে তার দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। সম্ভবত সেই আবেগ রণবীরের সঙ্গে থেকে গিয়েছিল, যা তাকে তার দাদার নির্মিত স্বপ্ন পুনরুজ্জীবিত করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
আজ, চেম্বুরের সেই ঐতিহাসিক জমিতে যেখানে রাজ কাপুর একসময় সিনেমাটিক জাদু সৃষ্টি করেছিলেন, গোদরেজ প্রপার্টিজ গোদরেজ আরকেএস শিরোনামে একটি আবাসিক প্রকল্প নির্মাণ করছে।
রাজ কাপুর ১৯৪৮ সালে তার প্রথম পরিচালনার উদ্যোগ আগ নির্মাণের সময় চেম্বুরে আরকে স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন, প্রায় আট দশক পরে, তার নাতি সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে রাজ কাপুর এবং কাপুর বংশের ভক্তদের জন্য এটি দীর্ঘদিনের হারানো ধন পুনরুদ্ধারের মতো মনে হচ্ছে। চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
রাজ কাপুরের আওয়ারা শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি ভারতীয় সিনেমার এক অমূল্য সম্পদ। ছবিটির গান, বিশেষত “আওয়ারা হুঁ” বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। রাশিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছবিটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল।
রণবীর কাপুরের এই উদ্যোগ শুধু একটি ছবি নির্মাণ নয়, বরং পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। তার দাদা রাজ কাপুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
বলিউডের ইতিহাসে কাপুর পরিবারের অবদান অতুলনীয়। এই পরিবার ভারতীয় সিনেমায় যুগের পর যুগ ধরে অবদান রেখে আসছে। রণবীরের এই পদক্ষেপ সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার একটি প্রয়াস।
আওয়ারার রিমেক নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রণবীর এবং দীপিকার জুটি আগেও বেশ কয়েকটি সফল ছবিতে দেখা গেছে। আয়ান মুখার্জির পরিচালনায় এই প্রজেক্ট নিঃসন্দেহে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
