Sunday, June 22, 2025
Homeজাতীয়চীনে রপ্তানি হচ্ছে রাজশাহীর আম: ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার সম্ভাবনা

চীনে রপ্তানি হচ্ছে রাজশাহীর আম: ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার সম্ভাবনা

ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৫, ০৭:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহীর সুস্বাদু ও ঘ্রাণযুক্ত আমের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার বাংলাদেশের আম যাচ্ছে চীনে। বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে বৃহত্তর রাজশাহীতে আমকে ঘিরে ১০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ইতোমধ্যে গুটি জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি ইত্যাদি জাতের আম বাজারে আসবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, “এই মৌসুমে আম সংগ্রহ, বাজারজাত এবং কুরিয়ারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ অঞ্চলে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।”

বাঘা উপজেলা আম উৎপাদনে রাজশাহীর শীর্ষে। এখান থেকেই গেল বছর ১০টি দেশে ৩৬ টন আম রপ্তানি হয়েছে। স্থানীয় চাষি মকবুল হোসেন বলেন, “বাঘার আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ একেবারে আলাদা। আমি গত বছর ৫০ মন আম রপ্তানি করেছি, এ বছর আরও বেশি রপ্তানির আশা করছি।”

রাজশাহী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা জানান, “এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ টন।”

নওগাঁতেও আমচাষ বেড়েছে। জেলার কৃষি উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে এবং প্রায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার লাখ টনের মতো আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা ড. ইয়াছিন আলী জানান, “৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ ও নতুন উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে উৎপাদন বেড়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম চাষ করছেন ১২২ জন চাষি।”

রাজশাহী ও নাটোরেও চলছে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন। রাজশাহী ম্যাঙ্গো প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, “রপ্তানির জন্য আমগুলো ছোট থাকা অবস্থায় ফ্রুট ব্যাগে ঢুকিয়ে বিষমুক্ত রাখা হয়। এই ব্যাগগুলো চীন থেকেই আমদানি করা হয়।”

চীনে রপ্তানির সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে সাম্প্রতিক চীন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের আমে আগ্রহ প্রকাশ করার পর। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ২৮ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগান পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশ থেকে আম আমদানিতে আগ্রহের কথা জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবার রাজশাহী অঞ্চলের আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বিদেশি বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও আম নিয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। এতে করে কৃষক, ব্যবসায়ী ও আম প্রেমী—সবাইই লাভবান হবেন।

RELATED NEWS

Latest News