Sunday, July 6, 2025
Homeবিনোদনকার্লোভি ভ্যারি চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনায় জার্মান পরিচালক স্টেফেন গোল্ডক্যাম্পের নতুন ছবি

কার্লোভি ভ্যারি চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনায় জার্মান পরিচালক স্টেফেন গোল্ডক্যাম্পের নতুন ছবি

‘রেইন ফেল অন দ্য নাথিং নিউ’ ছবির মাধ্যমে যুব অপরাধ, সমাজের বিচ্ছিন্নতা ও পুনর্বাসন তুলে ধরেছেন পরিচালক

চেক প্রজাতন্ত্রে আয়োজিত ৫৯তম কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘প্রক্সিমা প্রতিযোগিতা’ বিভাগে শনিবার বিশ্বপ্রিমিয়ার হয় জার্মান পরিচালক স্টেফেন গোল্ডক্যাম্পের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি Rain Fell on the Nothing New। যুব অপরাধ, কারাবাস এবং সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি প্রথম থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন নোয়া সায়েঙ্কো, যার এটি প্রথম চলচ্চিত্র। নোয়ার অভিনয়ে ‘নির্মল আবেগ ও বাস্তবতার মিশ্রণ’ দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি কেড়েছে।

চিত্রনাট্য অনুযায়ী, ডেভিড নামের এক তরুণ তার শাস্তির মেয়াদ juvenile detention-এ কাটিয়ে সমাজে নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমাজ তার অপরাধের ইতিহাস ভুলতে নারাজ, আর সেই বাধাই ডেভিডের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ছবিটি দর্শকদের সামনে প্রশ্ন রাখে—এই পরিস্থিতিতে কি ডেভিড মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে, নাকি সমাজ তাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে?

পরিচালক গোল্ডক্যাম্প জানান, তিনি ২০১৯ সালে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ করেন জেলবন্দিদের নিয়ে, যার অভিজ্ঞতা থেকেই এই পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির ভাবনা আসে। “অনেককে দেখেছি পুনর্বাসনের পরও আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আমি জানতে চেয়েছি কেন এমন হয়,” বলেন তিনি।

প্রথমে বাস্তব জীবনের অপরাধীদের নিয়ে কাজের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা বাদ দিয়ে নতুন কাউকে খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানেই নোয়া সায়েঙ্কোর আবির্ভাব। মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষকের ভূমিকায় থাকা নোয়া হঠাৎ করেই এক কাস্টিং ডিরেক্টরের নজরে আসেন এবং অভিনয়ের সুযোগ পান। সায়েঙ্কো বলেন, “অভিনয় আমার পুরোনো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেটি আবার জেগে উঠেছে এই ছবির মাধ্যমে।”

ছবিতে বাস্তবতার ছোঁয়া রাখতে চেয়েছেন পরিচালক। তাই অভিনয়ের চেয়ে বাস্তব আচরণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সায়েঙ্কো বলেন, “পরিচালক আমাকে দৃশ্যের আগে শুধু ছোট কিছু ইঙ্গিত দিতেন। আমি পরিস্থিতি বুঝে চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করতাম। অনেকটাই স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় ছিল।”

ছবিটির নির্মাণেও রয়েছে ভিজ্যুয়াল পার্থক্য। জেলের দৃশ্যগুলো ১৬ মিমি ফিল্মে ধারণ করা হয়েছে, যেখানে বাইরের দৃশ্য ৩৫ মিমিতে, যার ফলে দর্শক সহজেই দুটি জগতের ভিন্নতা অনুভব করতে পারেন। গোল্ডক্যাম্প বলেন, “কারাগারের দৃশ্যগুলো একটু কনফাইনড, রুক্ষ। বাইরের জগত উন্মুক্ত, কিন্তু তাতেও ডেভিডের জন্য নিরাপদ কিছু নেই।”

ছবির নাম নিয়েও রয়েছে দার্শনিক ব্যাখ্যা। প্রথমে নাম ছিল Der Optimismus, পরে সেটি পরিবর্তন করে রাখা হয় Rain Fell on the Nothing New, যা স্যামুয়েল বেকেটের একটি বিখ্যাত লাইনের পরিবর্তিত রূপ। “এই নামটি বাস্তবতার স্থবিরতা আর পরিবর্তনের অভাবকে প্রতিফলিত করে,” বলেন পরিচালক।

ছবিটির নির্মাণব্যবস্থা ছিল কম বাজেটের, তাই অল্প রিহার্সাল আর সীমিত টেকেই শুটিং শেষ করতে হয়েছে। কিন্তু অভিনেতা ও পরিচালক দুজনেই বলছেন, এই সীমাবদ্ধতাই অনুভূতির গভীরতা তৈরি করেছে।

নোয়া সায়েঙ্কো বলেন, “অভিনয় আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কাজ হয়ে উঠেছে। আমি ভবিষ্যতে আরও কাজ করতে চাই।” অন্যদিকে পরিচালক গোল্ডক্যাম্প ভবিষ্যতে একটি হেইস্ট মুভি নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এই ছবির মাধ্যমে কার্লোভি ভ্যারি উৎসবে যে সামাজিক বাস্তবতা ও মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা উঠে এসেছে, তা শুধু জার্মান দর্শকদের নয়, বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্রপ্রেমীদেরও ভাবনায় ফেলেছে।

RELATED NEWS

Latest News