Saturday, June 21, 2025
Homeআন্তর্জাতিক‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরুর আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল কি না, বিতর্কে উত্তাল ভারত

‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরুর আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল কি না, বিতর্কে উত্তাল ভারত

ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৫, ১৬:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, এই অভিযান শুরুর আগেই পাকিস্তানকে আগাম বার্তা দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি ‘অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার এই বক্তব্যকে ‘ভুয়া, বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত’ বলে দাবি করছে।

শনিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও শেয়ার করে রাহুল বলেন, “প্রতিরক্ষা অভিযানের শুরুতেই পাকিস্তানকে তথ্য দেওয়া একটি অপরাধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে সরকার তা করেছে। পাকিস্তানকে তথ্য দেওয়ার অনুমতি তাঁকে কে দিল?”

রাহুলের দাবি ছিল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে অভিযান শুরুর সময় ভারত পাকিস্তানকে জানিয়েছিল কেবল সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা হবে। ভিডিওতে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “আমরা পাকিস্তানকে জানিয়েছিলাম, আমাদের আঘাত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেই। সামরিক স্থাপনায় নয়। কিন্তু তারা সেটা মানেনি।”

এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। বিজেপি মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারি এক ঘণ্টার মধ্যেই রাহুলের বক্তব্য খণ্ডন করে বলেন, “রাহুল ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছেন।” তিনি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) একটি ফ্যাক্টচেক শেয়ার করেন, যেখানে বলা হয়, “জয়শঙ্করের বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপারেশন শুরুর আগেই পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে—এমন বক্তব্য কখনোই তিনি দেননি।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শনিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জানায়, জয়শঙ্কর বলেছিলেন অপারেশন শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছিল কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেই হামলা হবে। তবে এটিকে অপারেশন শুরুর আগের বার্তা হিসেবে উপস্থাপন করা ‘অপব্যাখ্যা’ বলে মন্তব্য করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এর জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালায়, যার আওতায় পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়। এর মধ্যে লস্কর-ই-তাইয়েবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তরও ছিল।

এই হামলার জবাবে পাকিস্তান পরপর তিন দিন ভারতীয় সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করে। ভারত তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতিহত করে এবং পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের লাহোরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে।

চার দিনব্যাপী এই পাল্টাপাল্টি অভিযানের পর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ভারত দাবি করে, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায় এবং দুই দেশের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়। তবে পাকিস্তান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে তারা।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে এই নতুন বিতর্কে ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দল কংগ্রেস, অন্যদিকে সরকারি মহল এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দাবি করছে, তথ্য বিকৃতি করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে বিরোধীরা। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এখন তা দেখার অপেক্ষা।

RELATED NEWS

Latest News