Sunday, October 19, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজা শান্তবিরতির অংশ হিসেবে রাফাহ সীমান্ত পুনরায় খুলতে পারে ইসরায়েল, সহায়তা পৌঁছে...

গাজা শান্তবিরতির অংশ হিসেবে রাফাহ সীমান্ত পুনরায় খুলতে পারে ইসরায়েল, সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি

বন্দী বিনিময় ও দুই বছরের সংঘর্ষের পর মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাফাহ পুনরায় খোলার নানা চিহ্ন দেখাচ্ছে; দেহসমূহ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপ তীব্র

ইসরায়েল বুধবার গাজার একমাত্র সীমান্ত পাস রাফাহ খুলে দিতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। খোলা হলে সেখানে আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ সম্মত নিয়মে মানবিক সাহায্য প্রবেশের পথে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। খবর অনুযায়ী রাফাহ খোলার সিদ্ধান্তটি একটি মার্কিন সমর্থিত শান্তির চুক্তির অংশ হিসেবে আসছে। চুক্তির মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের বন্দী থাকা ব্যক্তিদের ও ফিলিস্তিনি কুখ্যাত বন্দীদের বিনিময়, এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ক্যান জানায়, রাফাহ দ্রুতই খোলা সম্ভব হলেও হামাসের কাছ থেকে এখনও কিছু নিহত বন্দীর দেহ হস্তান্তর নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। হামাস এখন পর্যন্ত আটটি দেহ হস্তান্তর করেছে, যার মধ্যে সাতটির পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। অন্যান্য ২০টির কবরে থাকা দেহের বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।

বন্দী বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি

সামরিক সূত্রে বলা হয়েছে, বিনিময় প্রক্রিয়ায় শেষ জীবিত বন্দী ২০ জন দেশে ফিরেছে। বিনিময়ের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও শর্তানুযায়ী কার্যকর করা হয়েছে।

তবে দেশের অভ্যন্তরে নিহত সৈন্যদের দেহ ফিরিয়ে আনা নিয়ে চাপে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। উগ্রপন্থী নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভীর হামাস দেহ না ফেরালে গাজায় সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন।

মানবিক চাহিদা ও ত্রাণ তৎপরতা

ক্যান জানায়, বুধবার নতুন করে অানুমানিক ৬০০টি ট্রাক মানবিক সাহায্য গাজায় পাঠানো হবে। এই ত্রাণই হবে জাতিসংঘ, স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি খাত ও দাতা দেশের মাধ্যমে প্রেরিত। র‍্যাপিডভাবে ত্রাণ বিতরণ শুরু হলে ঘনীভূত জনসংখ্যার ভুক্তভোগী জনগণকে ভূমিকা পাওয়া সম্ভব হবে। তবু কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও প্রবেশাধিকার রোধজনিত জটিলতা রয়েছে।

আগস্ট শেষে জাতিসংঘ গাজায় মহামার্ঘার ঘোষণা করেছিল, যদিও ইসরায়েল সেই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবু দীর্ঘ সংঘর্ষে নষ্ট নগর ও অবকাঠামো, খাবার ও পানীয় জলের ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্রমহ্রাস পরিস্থিতিকে মানবিক সংকটে পরিণত করেছে।

রাজনৈতিক শর্ত এবং বিরোধিতার দিকগুলো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ পয়েন্টের পরিকল্পনার মধ্যে ত্রাণ ফেরানো ছাড়াও হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করার দাবি আছে। হামাস শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্প বলছেন, যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে তাদের দোষমুক্তি দেওয়া হবে, আর যে না মানবে তাদের বিরুদ্ধে জোর প্রয়োগ করা হবে। তিনি বলেছেন, যদি তারা অস্ত্র ত্যাগ না করে তবে তাদের অস্ত্রশস্ত্র কর্মবিরতই করানো হবে এবং তা দ্রুত ও কখনও কখনও সহিংসভাবে করা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে ভবিষ্যতের সাজানো ব্যবস্থায় হামাসকে কোনোভাবে শাসন ব্যবস্থায় স্থান দেওয়া যাবে না।

গাজার অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা

যুদ্ধের পর গাজার বিভিন্ন স্থানে হামাস তার নিয়ন্ত্রণ শক্ত করেছে এবং শহরগুলোতে পুলিশি কার্যক্রম বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীণ বন্দুকধারী দল ও গোত্রগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। হামাস কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজনকে ‘গণরাস্তায় শাস্তি’ হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের দৃশ্য প্রকাশ করেছে, যা একটি নিরাপত্তা শাসন কায়েমের সংকেত দিচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী সরিয়ে নেয়ার পরে শহরগুলোতে কালো মুখোশধারী নিরাপত্তা ইউনিটের গশত চলছে।

কানটির সঙ্গে কথা বলায় একজন নিরাপত্তা সূত্র বলেছে যে বেহায়াপ্রবণতা ও আইনশৃঙ্খলা ভাঙ্গচুর রোধ করতেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গাজার কিছু বেসামরিক নাগরিক এ ধরনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে স্বস্তি পেয়েছেন। এক বাসিন্দা বললেন, “যুদ্ধ বন্ধের পর পুলিশ যখন রাস্তায় ঢুকল, তখন নিরাপত্তাবোধ শুরু হয়েছে।”

অবশিষ্ট অনিশ্চয়তা

রাফাহ খুলে দিলে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়ক হবে, তবে দেহসমূহের বিনিময়, হামাসের ভবিষ্যত ভূমিকা, এবং অঞ্চলটিতে স্থায়ী নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কিভাবে গড়া হবে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানবিক প্রবেশাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিচ্ছে।

RELATED NEWS

Latest News