ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছে কাতার। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাতার এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আনসারি বলেন, “আমরা ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে যে কূটনৈতিক গতি তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে গাজায় আলোচনার নতুন দ্বার উন্মোচনের চেষ্টা করছি।” তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা এই সুযোগ হারাই, তাহলে সেটি আগের অনেক হারানো সম্ভাবনার মতোই হবে।”
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এর আগে ইরান কাতারের একটি মার্কিন ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে ওঠে।
আনসারি জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের আমিরকে ফোন করে জানান যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা তৈরি করছে। কাতার তখন উত্তেজনা না বাড়িয়ে শান্তির পথ বেছে নেয়।”
তিনি বলেন, “এখন এমন সময়, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে, ইসরায়েল ও হামাসকে আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার সময় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, যেখানে হামাসের কাছে আটক কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায়। তবে সেই যুদ্ধবিরতি মার্চে ভেঙে পড়ে এবং এরপর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মাত্রা বাড়তে থাকে।
আনসারি বলেন, “বর্তমানে ইসরায়েল ও হামাস সরাসরি কোনও আলোচনায় নেই, তবে কাতার উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া গাজা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।”
ইতোমধ্যে গাজায় ২০ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধ চলেছে এবং এতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শান্তির একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আঞ্চলিক চাপ সেই সম্ভাবনাকে কতটা বাস্তবে রূপ দেবে, তা সময়ই বলে দেবে।