স্পোর্টস ডেস্ক; ঢাকা, ১লা জুন ২০২৫: চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল সাধারণত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মঞ্চ। কিন্তু এই ম্যাচটা সেই হিসাব গুলিয়ে দিল। একদিকে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোল করা দল পিএসজি, অন্যদিকে সবচেয়ে কম গোল খাওয়া দল ইন্টার মিলান। অথচ মাঠের লড়াইয়ে কোনো উত্তেজনাই টিকে থাকেনি।
প্যারিস সেন্ট জার্মেইন ৫-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিল ইন্টারকে।
এই জয়ে পিএসজি প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট জিতে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই জয়েই সম্পন্ন হয়েছে তাদের ‘ট্রেবল’ — লিগ, কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়।
শুরুটা করেন ইন্টার থেকে আসা সাবেক ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। গোল করার পর সাবেক ক্লাবের প্রতি সম্মান জানিয়ে উদযাপন করেননি। কিন্তু ম্যাচের আসল নায়ক ছিলেন ১৯ বছর বয়সী দেজ্যের দুয়ে।
একটা ফাইনালে যেখানে লাওতারো মার্তিনেজ বা উসমান দেম্বেলের মতো তারকারা খেলছেন, সেখানে নিজের আলো জ্বালিয়ে নেন এখনও ২০ না পেরোনো দুয়ে। ২০ মিনিটে প্রথম গোল, ৬৩ মিনিটে দ্বিতীয়। ইন্টার ডিফেন্ডারদের প্রায় একার হাতে বিধ্বস্ত করে দেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড।
এরপর খভিচা কাভারাতশখেলিয়া যোগ করেন চতুর্থ গোল। শেষ দিকে গোল করেন মায়লুলু। তখন সিমোন ইনজাঘির চোখে-মুখে ক্লান্তি আর নিরুপায় স্বীকৃতি। ৫-০ তে শেষ হয় ম্যাচ।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কোনো দল ফাইনালে এত বড় ব্যবধানে জেতেনি। আর পিএসজি পেল তাদের বহু প্রতীক্ষিত প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপা।
আরো অদ্ভুত এক সমাপতন—এই প্রথমবার নেইমার, মেসি ও এমবাপ্পে ছাড়া মাঠে নামল পিএসজি। তাদের ছাড়াই ইতিহাস গড়ল ক্লাবটি।
লুইস এনরিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলেছিলেন, তারকানির্ভর ফুটবল থেকে বেরিয়ে আসতে চান। কিলিয়ান এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়ার সময় তাকে রাখার জন্য একটুও চেষ্টা করেননি এনরিকে। এখন দেখা যাচ্ছে, তার সেই সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক।
এই ট্রেবল লুইস এনরিকের জন্য আবেগঘনও। আগের ট্রেবল জয়ের সময় মাঠে ছিল তার ছোট মেয়ে জানা। ৯ বছর বয়সে হারিয়ে ফেলেছিলেন তাকে হাড়ের ক্যানসারে। এবার এনরিকে আগে থেকেই বলেছিলেন, ফাইনাল জিতলে সেটি জানাকেই উৎসর্গ করবেন।
ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারিতে ভেসে উঠেছিল বিশাল এক তিফো, যেখানে আঁকা ছিল জানার ছবি। ম্যাচ শেষে সেই শিরোপা এল তার দিকেই—এক নীরব নৈবেদ্য হয়ে।
ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ছিলেন ক্লাব চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফি। বছরের পর বছর যিনি কোটি কোটি ডলার খরচ করেছেন এই দিনটির জন্য। মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে—সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও এবার কাজ হলো।
তার হাসিটা চওড়াই হওয়ার কথা।
কারণ পিএসজি অবশেষে সফল। ইউরোপে রাজত্ব করল তারা, প্রথমবারের মতো। আর সেটা হলো এক নিখুঁত, নিঃশব্দ, ধ্বংসাত্মক এক জয়ের মাধ্যমে।