Sunday, November 9, 2025
Homeখেলাধুলাযুদ্ধের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ঢাকায় ফিলিস্তিনি তীরন্দাজরা, প্রতিটি তীরই শান্তির বার্তা

যুদ্ধের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ঢাকায় ফিলিস্তিনি তীরন্দাজরা, প্রতিটি তীরই শান্তির বার্তা

টিয়ার ২৪তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে এসেছেন তারা, সব প্রতিকূলতা জয় করে দেশের পতাকা তুলে ধরার প্রত্যয়

যখন গাজায় বোমার শব্দ আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ, ঠিক সেই সময়ে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন চার ফিলিস্তিনি তীরন্দাজ। তাদের হাতে শুধু তীর-ধনুক নয়, রয়েছে নিজ দেশের মানুষের যন্ত্রণা, গর্ব এবং অদম্য চেতনার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

অবরুদ্ধ স্বদেশের বুকে যখন যুদ্ধের আগুন জ্বলছে, তখন তারা টিয়ার ২৪তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছেন। তাদের জন্য ছোড়া প্রতিটি তীর যেন শান্তির জন্য এক নীরব প্রার্থনা, আর মাঠের প্রতিটি নিঃশ্বাস হতাশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক দৃঢ় প্রকাশ।

তিনজন রিকার্ভ এবং একজন কম্পাউন্ড আর্চার নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনের এই দলটি প্রতিকূলতার মাঝে টিকে থাকার এক জীবন্ত প্রতীক। বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নিদ্রাহীন রাত এবং হৃদয়ে জমে থাকা সার্বক্ষণিক ভয়কে সঙ্গী করেও তারা দেশের পতাকা তুলে ধরতে এসেছেন। তারা বিশ্বকে দেখাতে চান, ফিলিস্তিন এখনো দাঁড়িয়ে আছে, এখনো স্বপ্ন দেখে এবং আশা ছাড়ে না।

ঢাকায় ডেইলি সানের সাথে আলাপকালে ফিলিস্তিনি শুটিং অ্যান্ড আর্চারি ফেডারেশনের সভাপতি ড. মান বারাকাত তাদের সংগ্রাম এবং কৃতজ্ঞতার এক আবেগঘন বিবরণ দিয়েছেন।

ড. বারাকাত বলেন, “প্রতিদিন আমরা ফিলিস্তিনে হত্যা, বোমা হামলা এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখছি। ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া দল সবাই কষ্ট পাচ্ছে, বিশেষ করে গাজায়। সবকিছু সত্ত্বেও আমরা আমাদের জনগণ, ক্রীড়াবিদ এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এখানে এসেছি। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কিছু অর্জন করাই আমাদের অঙ্গীকার ও আশা।”

বাংলাদেশে পৌঁছানোটাও ছিল তাদের জন্য সাহস এবং বিশ্বাসের এক কঠিন পরীক্ষা, যা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সহযোগিতায়।

তিনি বলেন, “ সত্যি বলতে, বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সমর্থন ছাড়া আমরা আজ এখানে থাকতে পারতাম না। তারা আমাদের জন্য সবকিছু আয়োজন করেছে এবং আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ফিলিস্তিন এবং ফিলিস্তিনি আর্চারির প্রতি দৃঢ় ও আন্তরিক সমর্থনের জন্য জনাব গাজী শাবুলের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ।”

চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ড. বারাকাত কিছুক্ষণ থেমে মৃদুস্বরে বলেন, “ফিলিস্তিনে প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব কঠিন। পরিস্থিতি জটিল। কিন্তু আমাদের চালিয়ে যাওয়ার আশা এবং সংকল্প আছে। আমাদের স্বপ্ন একদিন অলিম্পিকে পৌঁছানো এবং ইনশাআল্লাহ, একটি স্বর্ণপদক জেতা।”

ফিলিস্তিনি তীরন্দাজরা ইতোমধ্যেই তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ড. বারাকাত স্মরণ করে বলেন, “২০২৪ সালে ইরাকে অনুষ্ঠিত পশ্চিম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের কম্পাউন্ড দল দলগত এবং ব্যক্তিগত উভয় ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। আমরা ধাপে ধাপে উন্নতি করছি, প্রতিবার আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

২৪তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে যখন তাদের তীর ঢাকার শান্ত বাতাস ভেদ করে এগিয়ে যাবে, তখন তা শুধু বিজয়ের আশা নয়, বরং একটি জাতির কণ্ঠস্বর বহন করবে যে জাতি নীরব থাকতে নারাজ।

ড. বারাকাত শেষে বলেন, “ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের সকলের জন্য একটি বড় সম্মানের। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব, এবং ইনশাআল্লাহ, এবার আমরা একটি পদক নিয়ে ফিরব আমাদের জনগণের জন্য, আমাদের মাতৃভূমির জন্য এবং শান্তির জন্য।”

RELATED NEWS

Latest News