পাকিস্তান সরকার শনিবার (৮ নভেম্বর) সিনেটে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপন করেছে। বিরোধী সদস্যরা এটিকে তড়িঘড়ি ও ব্যাপক পরিবর্তনের অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার ২৬ পৃষ্ঠার খসড়া বিলটি উত্থাপন করেন। এর আনুষ্ঠানিক নাম কনস্টিটিউশন (টোয়েন্টি-সেভেন্থ অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২৫। ফেডারেল ক্যাবিনেটের অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এটি উত্থাপিত হয়।
বিরোধীরা অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত আলোচনা বা পরামর্শ ছাড়াই সরকার বড় ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন চাপিয়ে দিতে চায়। ক্ষমতাসীনরা এটিকে প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি বলে পক্ষ সমর্থন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আজারবাইজানের ভিক্টরি ডে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাকুতে গিয়ে ভিডিও লিঙ্কে ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন। সেখানে তিনি ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে ছিলেন।
সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রাজা গিলানি বিলটি আইন ও বিচার কমিটিতে পাঠান। জাতীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে যৌথ সভার নির্দেশ দেন। বিলে ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট গঠন, হাইকোর্ট বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন, প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য সীমা বৃদ্ধি এবং সেনা নেতৃত্বের কাঠামোতে পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।
অসাধারণভাবে শনিবার সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় শুরুর কথা থাকলেও ক্যাবিনেট অনুমোদনের অপেক্ষায় অর্ধ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। অধিবেশন চলাকালীন দুই কক্ষের আইন কমিটি ইন-ক্যামেরা যৌথ সভা করে। জেইউআই-এফ ও পিটিআই সদস্যরা এটি বর্জন করেন।
আরেক বিরল পদক্ষেপে রোববার বিকেল ৩টায় সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে। একমাত্র এজেন্ডা বিলটি বিবেচনা। এতে পরিবর্তন পাসের অসাধারণ ত্বরা প্রকাশ পেয়েছে।
পিটিআইয়ের সংসদীয় নেতা ব্যারিস্টার আলি জাফর বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নিয়োগ না হওয়ায় বিল নিয়ে আলোচনা অনুচিত। সরকার ও মিত্ররা তড়িঘড়ি করছে। সিনেটকে পুরো কমিটিতে রূপান্তর করে খসড়া আলোচনার প্রস্তাব দেন তিনি।
বিলের বৈশিষ্ট্য আইনমন্ত্রী জানান, ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্টের ধারণা ২০০৬ সালের চার্টার অব ডেমোক্রেসিতে পিপিপি ও পিএমএল-এন সম্মত হয়েছিল। প্রস্তাবিত কোর্টে সব প্রদেশের বিচারক থাকবেন। সাংবিধানিক মামলা শুনবেন। অন্য কোর্টগুলো সাধারণ মামলা চালিয়ে যাবে।
২৬তম সংশোধনীর আলোচনায় কেউ কনস্টিটিউশনাল বেঞ্চের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাকলগ কমেনি। কারণ বিচারকরা রুটিন মামলায় ব্যস্ত থাকেন। মাত্র ৫-৬ শতাংশ মামলা কোর্টের ৪০ শতাংশ সময় নেয়।
আর্টিকেল ২৪৩-এ সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ফেডারেল সরকারের হাতে। এতে কিছু ধারা যোগ করা হচ্ছে। আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেওয়া হয়েছে। এটি উপাধি, পদবি নয়। সেনাপ্রধানের মেয়াদ পাঁচ বছর।
২৭ নভেম্বর থেকে চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি পদ বিলুপ্ত হবে। বর্তমানের অবসরের পর নতুন নিয়োগ হবে না। সেনাপ্রধান প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নেবেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানের সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের কমান্ডার নিয়োগ করবেন।
ফিল্ড মার্শাল বা সমতুল্য পদে পদোন্নতি পেলে আজীবন পদবি, সুবিধা ও ইউনিফর্ম বজায় থাকবে। মেয়াদ শেষে সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থে দায়িত্ব নির্ধারণ করবে।
আর্টিকেল ২৪৮ সংশোধনে রাষ্ট্রপতিকে আজীবন ফৌজদারি মামলা বা গ্রেপ্তার থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। গভর্নরদের কেবল মেয়াদকালীন সুরক্ষা থাকবে।
সিনেট নির্বাচনে কেপি প্রদেশে এক বছরের বেশি বিলম্ব হয়েছিল। নির্বাচনের পর প্রথম কাজ চেয়ারম্যান নির্বাচন। ভবিষ্যতে বিতর্ক এড়াতে স্পষ্টীকরণ ধারা যোগ করা হয়েছে। প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সীমা ১১ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
সংবিধানে আঘাত এমডব্লিউএম সিনেটর আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস (পিটিআই মনোনীত বিরোধীদলীয় নেতা) প্রশ্ন তোলেন, ঐকমত্য ছাড়া এত বড় সংশোধন কেন তড়িঘড়ি। এটিকে সংবিধানে আঘাত বলে অভিহিত করেন। বর্তমান সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বমূলক নয়, ফর্ম-৪৭ এর ফসল। বিচার বিভাগকে অকেজো করার উদ্দেশ্য। দরিদ্রদের জন্য কোনো সংশোধনী নেই।
জেইউআই-এফ সিনেটর কামরান মুর্তজা বলেন, ১৩ মাস আগের ২৬তম সংশোধনী উল্টে ফেলা হচ্ছে।
পিপিপির শেরি রেহমান বলেন, ফেডারেশনের খরচ মেটাতে না পারলে সবাই বসে অপচয় খুঁজি। প্রদেশ কাটছাঁট নয়। পিপিপি সবসময় সংবিধান, ১৮তম সংশোধনী ও ফেডারেটিং ইউনিটের অধিকার রক্ষা করেছে। এই বিলে কিছু উল্টানো হচ্ছে না।
এএনপি নেতা আইমাল ওয়ালি খান বলেন, জনগণের পক্ষে হলে সমর্থন করব। আইন প্রণয়ন সরকারের অধিকার। বিরোধীদের কমিটিতে যোগ দিয়ে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান।
সূত্র: ডন, জিও নিউজ
