Tuesday, October 28, 2025
Homeজাতীয়পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের খেসারত: জলাবদ্ধতায় ৫ গ্রামের ১৫০০ কৃষক দিশেহারা

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের খেসারত: জলাবদ্ধতায় ৫ গ্রামের ১৫০০ কৃষক দিশেহারা

নির্মাণকাজের সময় খাল ভরাট করায় চার বছর ধরে প্রায় ১৫০ একর কৃষি জমি পানির নিচে, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজে অবহেলার কারণে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরচর ও পাঁচ্চর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ১৫০ একর (৬০ হেক্টর) কৃষি জমি গত চার বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে, যার ফলে প্রায় দেড় হাজার কৃষক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেললাইন নির্মাণের সময় এর নিচে থাকা কালভার্টের সঙ্গে সংযুক্ত খালটি ভরাট করে ফেলায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হাজী নেদুকান চরকান্দি, পুরান কান্দি এবং সিকদার কান্দির মতো গ্রামগুলো প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে থাকছে। এতে বছরে দুটি মৌসুমের ফসল নষ্ট হচ্ছে।

কৃষকরা জানান, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে জমি শুকাতে অনেক সময় লাগে, ফলে আলু, গম, পেঁয়াজ, রসুন এবং সরিষার মতো রবিশস্য চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একসময়ের উর্বর ফসলি জমি এখন বিলের মতো দেখাচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেললাইনের কাজ শেষে খালটি পুনরায় খনন করে পাঁচ্চর খালের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজ শেষ হলেও খালটি খুলে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রেললাইনের নিচে কালভার্ট এবং সুইসগেট নির্মাণ করা হলেও খালের মুখ বন্ধই রয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও ফসলি জমিতে পানি জমে এবং তা পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরে প্রবেশ করে, যা জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

পাঁচ্চর রেলওয়ে কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে হতাশ কণ্ঠে কৃষক আবুল কালাম খান বলেন, “আমার দুই একর জমিতে একসময় সারা বছর ধান, পাট ও সবজি হতো। এখন সেখানে শুধু পানি আর কাদা। চার বছর ধরে আমি কোনো চাষ করতে পারিনি। আগে আমি ৫০ থেকে ১০০ মণ ধান পেতাম, আর এখন আমাকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে।”

আরেক কৃষক কালাম চৌকিদার একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, “রেললাইন হয়েছে, কিন্তু আমাদের জীবন থেমে গেছে। বছরের পর বছর আমাদের জমি পানিতে ডুবে আছে। রবি মৌসুমেও আমরা চাষ করতে পারি না। এখন বৃষ্টির পানি আমাদের ঘরে ঢুকে যায়।”

কৃষকরা খালের মুখ খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, এটি করা হলে তাদের কৃষি উৎপাদন এবং জীবিকা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রায় ১৫০ একর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “এতো জমিতে ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান সমস্যাটি স্বীকার করে বলেন, “রেললাইনের কালভার্ট বন্ধ থাকায় পাঁচটি স্থানে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এ বছর খাল খনন বা পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে আমরা কালভার্ট নির্মাণ করেছি। ওই স্থানেও একটি কালভার্ট আছে। তবে স্থানীয়দের বাধার কারণে আমরা কালভার্টটি নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারিনি। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা শিগগিরই সংযোগ স্থাপনের পদক্ষেপ নেব।”

তবে আপাতত, শিবচরের কৃষকরা একটি সমাধানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তাদের জমি পানির নিচে এবং জীবিকা ঝুঁকির মুখে, এমন একটি সমাধান যা তাদের জমি ও আশা দুটোই ফিরিয়ে আনতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News