Wednesday, November 5, 2025
Homeজাতীয়অক্সফামের ড্যাশবোর্ড: জলবায়ু পরিবর্তনে ১৯ জেলায় ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি

অক্সফামের ড্যাশবোর্ড: জলবায়ু পরিবর্তনে ১৯ জেলায় ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি

মাথাপিছু ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা, নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে বাংলাদেশের ১৯টি জেলায় ১৩৫ কোটি টাকা (১১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে গড়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা (৯৫৪ ডলার) লোকসান গুনতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের নতুন ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড’ এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বুধবার এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বে কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান নগণ্য হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়, যা দেশের মোট জিডিপির ১ থেকে ২ শতাংশ। তবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার মতো ধীরগতির প্রভাবগুলো হিসাবে নিলে বেসরকারি মতে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

এই তথ্যগত ঘাটতি পূরণে অক্সফাম ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড’ নামে একটি ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী নিজেরাই জলবায়ুজনিত অর্থনৈতিক ও অ-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নথিভুক্ত করতে পারবে। গণবিজ্ঞান, স্যাটেলাইট ডেটা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত যাচাইকরণ পদ্ধতির সমন্বয়ে এই ড্যাশবোর্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো তৃণমূল থেকে সংগৃহীত তথ্যের একটি নির্ভরযোগ্য قاعدة তৈরি করা, যা নীতি নির্ধারণ, অর্থায়ন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

ড্যাশবোর্ডটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, “এই ড্যাশবোর্ডটি দেখিয়েছে কীভাবে স্থানীয় জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ একসঙ্গে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন আনতে পারে। যখন তৃণমূলের কণ্ঠস্বর নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে, তখন আমরা শক্তিশালী জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি যে তহবিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।”

অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বলেন, “এই উদ্যোগ যন্ত্রণাকে নীতিতে রূপান্তর করে। কমিউনিটির গল্পগুলোকে বৈজ্ঞানিক তথ্যে পরিণত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু নেতৃত্বে একটি বৈশ্বিক উদাহরণ তৈরি করছে। দূষণকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং সঠিক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রয়োজন, আর এর মাধ্যমেই প্রকৃত ন্যায়বিচার শুরু হয়।”

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে জলবায়ু ক্ষতির লিঙ্গভিত্তিক প্রভাবের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। যদিও মোট আর্থিক ক্ষতির হিসাবে পুরুষরা এগিয়ে, তবে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পানিবাহিত রোগের মতো বিষয়গুলোতে নারীরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিবেদনে কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা এবং সুনামগঞ্জকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও সতর্ক করা হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি বিশ্বব্যাপী বৈষম্যকে আরও গভীর করছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ যেখানে ঐতিহাসিক কার্বন নিঃসরণের অর্ধেকের জন্য দায়ী, সেখানে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এর সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে।

অক্সফামের ড. মোহাম্মদ এমরান হাসান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। মো. সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং তরুণ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা কমিউনিটি-ভিত্তিক তথ্য কীভাবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন।

RELATED NEWS

Latest News