আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কোনো কর্মকর্তাকে আসন্ন নির্বাচনে সম্পৃক্ত করা হবে না।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ক ওই বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো হলো মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদায়ন, নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার মোকাবিলা, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শফিকুল আলম বলেন, মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর ওপর বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কোনো কর্মকর্তাকে আগামী নির্বাচনে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, “গত তিন নির্বাচনে যারা রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ন্যূনতম ভূমিকাও রেখেছেন, তাদের এবার সাধারণ নির্বাচনে সম্পৃক্ত করা হবে না।” নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এ ধরনের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কর্মকর্তাদের পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক দক্ষতা, শারীরিক ও পেশাগত যোগ্যতা, পূর্ববর্তী কর্মস্থলের রেকর্ড, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। পদায়ন প্রক্রিয়াটি দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যোগ্যতম কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। কোনো কর্মকর্তাকে তার নিজ জেলায় বা যেখানে তার আত্মীয়স্বজন বা স্বার্থের সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে পদায়ন করা হবে না।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, তারা ইতোমধ্যে যোগ্য কর্মকর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন এবং ৬৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তা চিহ্নিত করেছেন। দেশজুড়ে প্রায় ৯২,৫০০ সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে, যার মধ্যে ৯০,০০০ সেনা সদস্য থাকবেন। প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি করে সেনা মোতায়েন করা হবে।
বৈঠকে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরা ব্যবহার এবং প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কারাবন্দিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত ভিডিও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
