Friday, November 14, 2025
Homeখেলাধুলাবিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার কঠিন লড়াইয়ে নাইজেরিয়া, শঙ্কায় ওসিমেন

বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার কঠিন লড়াইয়ে নাইজেরিয়া, শঙ্কায় ওসিমেন

আফ্রিকান প্লে-অফে কঠিন পরীক্ষার মুখে সুপার ঈগলরা, মাঠের বাইরের বিতর্কও সঙ্গী

নিজের প্রজন্মের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়েও বিশ্বকাপে খেলতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছেন তারকা স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া আফ্রিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফ থেকে নাইজেরিয়া ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে ব্যর্থ হলে এই শঙ্কা সত্যি হতে পারে।

গত দুই বছর ধরে চলা বাছাইপর্বের ১০টি ম্যাচের বেশিরভাগ সময় ইনজুরির কারণে ওসিমেনের অনুপস্থিতিই ‘সুপার ঈগলদের’ প্লে-অফের কঠিন সমীকরণে ফেলার অন্যতম কারণ। মরক্কোতে অনুষ্ঠিতব্য চার দলের এই প্লে-অফে নাইজেরিয়া প্রথমে গ্যাবনের মুখোমুখি হবে।

এই ম্যাচের বিজয়ী দল রবিবার ক্যামেরুন বা কঙ্গোর মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ীর সাথে প্লে-অফ ফাইনালে লড়বে। তবে এখানেই শেষ নয়, এরপর মার্চে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ছয় দলের আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফেও উত্তীর্ণ হতে হবে।

২৬ বছর বয়সী ওসিমেন বর্তমানে তার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। গ্যালাতাসারাইয়ের হয়ে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। চার বছর আগে মুখে গুরুতর আঘাতের পর মেটাল প্লেট সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক পরে খেললেও, তার আদর্শ ডিদিয়ের দ্রগবার মতোই দক্ষতা, গতি এবং শক্তির মিশেলে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে চলেছেন তিনি।

একসময় ফুটবল ছেড়ে গির্জায় কাজ করা এই তরুণ, যিনি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন, এখন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া নাইজেরিয়ান ভক্তদের সব আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।

প্লে-অফের বন্ধুর পথ

নাইজেরিয়ার প্লে-অফের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না, এমনকি ভেন্যু রাবাতেও নয়, যেখানে বকেয়া বোনাসের দাবিতে খেলোয়াড়রা মঙ্গলবার অনুশীলন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ছয় দলের বাছাইপর্বের গ্রুপে নাইজেরিয়া শীর্ষ বাছাই ছিল, কিন্তু ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের জুনে ওসিমেন আহত থাকায় তারা প্রথম চারটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি। তবে ওসিমেনের খেলা পাঁচটি অপরাজিত ম্যাচে করা ছয় গোলের সুবাদে নাইজেরিয়া গ্রুপ বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার পেছনে থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।

প্লে-অফের সেমিফাইনালে নাইজেরিয়া গ্যাবনের বিপক্ষে ফেভারিট, যদিও ৩৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং তাদের বড় ভরসা। এর মধ্যেই প্রস্তুতির বিঘ্ন দলকে চিন্তায় ফেলেছে।

নাইজেরিয়ার অধিনায়ক উইলিয়াম ট্রস্ট-একং এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্টে লিখেছেন, “আমরা শুধু সামনের বড় ম্যাচগুলোর দিকেই মনোযোগ দিতে চাই।” পরে তিনি জানান যে বুধবার আর্থিক সমস্যাটি সমাধান করা হয়েছে।

ওসিমেনের বিশ্বকাপ ইতিহাস

২০১৫ সালে চিলিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার শিরোপা জয়ী দলের সদস্য হিসেবে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। টুর্নামেন্টের সাতটি ম্যাচেই গোল করেছিলেন তিনি এবং ফাইনালে মালিকে ২-০ গোলে হারানোর ম্যাচে প্রথম গোলটি করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১০টি গোল করার কৃতিত্ব দেখান।

১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হলেও, জার্মান ক্লাব ভলফসবার্গে একটি গোলশূন্য মৌসুম কাটানোর পর ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের দলে তাকে নেওয়া হয়নি। কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষ ধাপেও নাইজেরিয়া ব্যর্থ হয়, যখন ওসিমেন নাপোলির হয়ে দুর্দান্ত খেলছিলেন। ঘানা অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে ১-১ ড্র হওয়া দুই লেগের প্লে-অফে জিতে নেয়।

সাফল্যের পথ

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ওসিমেন বলেন, “আমি খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছি। আমি সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট।” অল্প বয়সে মা এবং ২০২০ সালে বাবাকে হারান তিনি। একসময় ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন কারণ “এ থেকে কিছুই হচ্ছিল না।”

তিনি বলেন, “মাধ্যমিক শেষ করার পর প্রায় দুই বছর আমি ফুটবল খেলিনি।” তখন তিনি যাজক ক্রিস ওয়াকিলাহোমের গির্জার সদস্য সংগ্রহের কাজ করতেন এবং প্রায় পাঁচ মাস গির্জাতেই থাকতেন।

ফুটবলে ফেরার পর নাইজেরিয়ার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ এবং ১৯৯৪ বিশ্বকাপের তারকা ইমানুয়েল আমুনিকে তার প্রতিভা আবিষ্কার করেন। নাপোলির হয়ে সেরি আ জেতা এবং ২০২৩ সালের আফ্রিকান বর্ষসেরা খেলোয়াড় হওয়া ওসিমেন এখন ২০২৬ সালে বিশ্বমঞ্চে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় আছেন।

RELATED NEWS

Latest News