২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার মামলায় পাকিস্তান বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তাহাওওর রানার বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দায়ের করেছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)। রানাকে “মূল ষড়যন্ত্রী” হিসেবে চিহ্নিত করে এ চার্জশিটে যুক্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (FBI)-এর উপস্থাপিত সাক্ষ্য, ইমেইল, কথোপকথন এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
এফবিআই একটি গোপন রেকর্ডিংয়ে হেডলি ও রানার মধ্যে ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এক গাড়ি ভ্রমণের সময়ের কথোপকথন সংরক্ষণ করে, যেখানে তারা মুম্বাই হামলা, লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT) প্রশংসা এবং ভবিষ্যৎ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও ২০০৯ সালের আগস্টে হেডলি ও সাজিদ মিরের (LeT কমান্ডার) মধ্যে ইমেইল বিনিময়ে দেখা যায়, রানা মুম্বাই হামলার জন্য মিরকে প্রশংসা করেন। রানার দুবাই সফরের তথ্যও FBI সংগ্রহ করেছে, যেখানে তিনি হামলার অন্যতম সংগঠক পেশো নামে পরিচিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক মেজরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রানার ভারতীয় অফিস “ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টার”-এর মাধ্যমে হেডলি মুম্বাইয়ে নজরদারি চালান। এই অফিসের ভাড়া সংক্রান্ত নথি, ভারতের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তানে হেডলির সফরের তথ্য, ভুয়া কাগজপত্র ও ভিসা সংক্রান্ত কৌশল, সবই চার্জশিটে যুক্ত হয়েছে।
NIA-এর দ্বিতীয় সূত্র জানায়, রানা সরাসরি হেডলির পাকিস্তানি সংযোগদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনে তথ্য পাঠাতেন। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হেডলির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এনআইএ। সেই সাক্ষাৎকারে উঠে আসে যে রানা ও হেডলি পাকিস্তানে একই সামরিক বোর্ডিং স্কুলে পড়তেন এবং পরস্পরের গভীর বন্ধু ছিলেন।
রানাকে ৫ বছর ধরে চলা প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার পর ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে একটি বিশেষ বিমানে ভারতে আনা হয় এবং সন্ত্রাসবাদ, হত্যা, ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, রানা ২০০৬ সাল থেকেই লস্কর-ই-তৈয়বা ও হেডলির সঙ্গে যৌথভাবে মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। হেডলিকে সাহায্য করতে তিনি নিজেই মুম্বাইয়ে অফিস খোলার অনুমতি দেন।
২৬/১১ হামলার ক্ষেত্রে মোট ১০ জনকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজন তখন পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন হাফিজ সাঈদ, জাকিউর রহমান লাখভি, সাজিদ মির, পেশো, মেজর ইকবাল, মেজর সামির আলি, আব্দুর রহমান মাক্কি এবং ইলিয়াস কাশ্মিরি। এদের মধ্যে কয়েকজনকে পাকিস্তানে সাজা দেওয়া হলেও ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, তারা পাকিস্তান সেনা গোয়েন্দা সংস্থার (ISI) আশ্রয়ে এখনও সক্রিয়।