গাজায় চলমান সংঘাত ও জিম্মি সংকট নিরসনে ওয়াশিংটনে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবারের এই বৈঠকে হামাসের সামরিক ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রয়াস নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের সব জিম্মি, জীবিত ও মৃত, ফিরিয়ে আনা এবং হামাসের সামরিক ও শাসনক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি জানান, এই প্রচেষ্টার পেছনে ইসরায়েলি সেনাদের ধারাবাহিক সামরিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এদিকে, হামাস জানিয়েছে তারা কোনওভাবেই আত্মসমর্পণ করবে না। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলে, “গাজা আত্মসমর্পণ করবে না এবং প্রতিরোধই শর্ত নির্ধারণ করবে।”
বর্তমানে কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। তবে মঙ্গলবার আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরও এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলি পক্ষ সাহায্যের প্রবেশে বাধা দেওয়ায় আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে না। আরেক সূত্র জানায়, ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা আলোচনার চেয়ে বেশি শুনছেন, যা নেতানিয়াহুর বাধাদানমূলক নীতির প্রতিফলন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি হতে পারে।”
এই চুক্তির আওতায় ১০ জন জীবিত ও ৯ জন মৃত জিম্মি ফেরত দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাসের আক্রমণে মোট ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে এখনও ৪৯ জন গাজায় আটক রয়েছেন।
ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের আগে গাজা থেকে হামাসের সম্পূর্ণ নির্মূল চায়, অপরদিকে হামাস চায় যুদ্ধ বন্ধ এবং পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার।
মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স। তাদের মধ্যে ছয় শিশু রয়েছে।
এ নিয়ে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই হিসাবকে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করে।
তবে গাজার ওপর কঠোর মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশের অসুবিধার কারণে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, “এই পরিস্থিতি একটি দুঃখজনক ট্র্যাজেডি, আমি এবং নেতানিয়াহু উভয়ই এটি সমাধান করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, অন্য পক্ষও তাই চায়।”
নেতানিয়াহুও স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, “আমরা একটি যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছি।”
এখন গোটা বিশ্বের নজর দোহায় চলমান আলোচনার দিকে। সম্ভাব্য চুক্তি হলে গাজায় দীর্ঘ ২১ মাসের সংঘাতের পর শান্তির পথ খুলে যেতে পারে।