ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা সিটিতে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করার জন্য সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি গাজায় আটক বাকি সব বন্দিকে মুক্ত করার জন্য তাৎক্ষণিক আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গাজা ডিভিশনের সদর দফতরে গিয়ে নেটানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা গাজা সিটি দখল করে হামাসকে পরাজিত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছি। একই সময়ে আমি বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য আলোচনার নির্দেশ দিয়েছি।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার প্রায় ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকতে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এই সেনা ডাকা শুরু হবে এবং অপারেশন “গিডিয়নস চারিয়টস”-এর দ্বিতীয় ধাপ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এদিকে গাজা সিটিতে হামলা জোরদার হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। শহরের বাসিন্দারা রাতভর গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। গাজার বাসিন্দা আহমাদ আল-শান্তি বলেন, “সারারাত বাড়ি কাঁপতে থাকে। বিস্ফোরণ, কামান, যুদ্ধবিমান, অ্যাম্বুলেন্স ও সাহায্যের চিৎকার আমাদের ঘুমাতে দেয় না।”
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন সামরিক পরিকল্পনা ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার হাসপাতাল ও সাহায্য সংস্থাগুলোকে দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই নির্দেশ মানতে রাজি নয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেটানিয়াহুর ঘোষণার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে। রেড ক্রস এটিকে “অসহনীয়” বলে আখ্যা দিয়েছে। ইসরায়েলের ভেতরেও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিরোধিতা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, বন্দিদের মুক্তি নিয়ে নতুন সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত মিলছে। ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ১০ জন বন্দি ও ১৮ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ইসরায়েল বলছে, সব বন্দি একসঙ্গে মুক্তি না দিলে তারা সমঝোতা মেনে নেবে না।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আক্রমণে ১ হাজার ২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও মানবিক সংকটের মধ্যেই বন্দি মুক্তি ও বড় সামরিক অভিযানের ঘোষণা বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।