নেপালে রাজনৈতিক সংকট গভীর আকার ধারণ করেছে। প্রাণঘাতী বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি অফিস, হোটেল ও সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করেছে এবং টহল জোরদার করেছে।
রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে। সব দলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে দ্রুত সমাধান আসবে।” তিনি সংকট নিরসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এ আন্দোলনকারীরা নিজেদের “জেন জেড” ব্যানারে পরিচিত। তাদের প্রধান দাবি হলো সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং পুরনো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পুনরায় ক্ষমতায় না আনা।
বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদে। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সহিংসতার সুযোগে দেশব্যাপী কারাগার ভেঙে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ বন্দি পালিয়ে যায়। এর মধ্যে মাত্র ২৫০ জনকে পুনরায় আটক করা সম্ভব হয়েছে বলে জানায় নিরাপত্তা বাহিনী।
৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এরপর থেকে তার অবস্থান অজানা। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের বৃহত্তম দলের নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো উচিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিক কার্যত আড়ালে চলে গেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম সামনে এসেছে। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞদের একত্র হয়ে পথ খুঁজতে হবে। সংসদ এখনও বহাল রয়েছে।” কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহও কার্কির প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের একাংশ মনে করছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে কেবল নির্বাচন আয়োজন করা এবং নতুনভাবে জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করা।
নেপালের এই সংকট দেশটির দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের এক-পঞ্চমাংশ বেকার। মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৪৪৭ মার্কিন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচনের মাধ্যমে সংকট উত্তরণ সম্ভব হলেও তা বাস্তবায়ন কত দ্রুত হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।