গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও তাদের নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের হামলার অভিযোগে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং রাত ৮টা থেকে কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে উলপুর-দুর্গাপুর সড়কে একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয় এবং ইউএনও’র গাড়িতে হামলার খবর পাওয়া যায়।
দুপুর ১২টার দিকে শতাধিক লাঠিসোটা হাতে স্লোগান দিতে দিতে একদল লোক মিছিল করে সমাবেশস্থলে এসে মঞ্চ ভাঙচুর, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং এনসিপি কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা এসে সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এনসিপির শীর্ষ নেতারা হামলার পরও বিকেল ২টা ৫ মিনিটে নির্ধারিত সমাবেশ শুরু করেন। তবে অনুষ্ঠান শেষে পার্ক ছাড়ার সময় চৌরঙ্গী রোড এলাকায় তাদের গাড়িবহরে আবারও হামলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী রফিক আহমেদ জানান, “দুই পাশে লাঠি হাতে লোকজন ঘিরে ফেলে। গুলি চলার শব্দ শোনা যায়। দুজনকে পড়ে যেতে দেখি।”
বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় এনসিপি নেতাদের জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১) ও ইমন (২৪) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা যান। আরও ৯ জন ভর্তি হন, যাদের অনেকেই অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায়।
ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. জিবিতেশ বিশ্বাস বলেন, “আহতদের শরীরে একাধিক আঘাত রয়েছে, আরও মরদেহ আসতে পারে।”
সরকার এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে “অপমানজনক ও ক্ষমার অযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে এবং হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, “এই সহিংসতা জনগণের অধিকারের চরম লঙ্ঘন। দোষীরা শাস্তি পাবে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই রক্তপাত বন্ধে জাতীয় ঐক্য দরকার।” জামায়াতে ইসলামী বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এনসিপি নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, আমরা ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করব।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল প্রশাসন, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল, মাদারীপুর, কুমিল্লায় এক ঘণ্টার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও কর্মীরা। এনসিপি নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় নেতাদের রক্ত ঝরানো হয়েছে, আমরা বিচার চাই।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলমান যুদ্ধাপরাধ ট্রায়ালের প্রেক্ষিতে ১২ মে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচনী কমিশনের আদেশে দলটির নিবন্ধন ও নৌকা প্রতীক বাতিল করা হয়।
নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উদয় হওয়া নাগরিক পার্টি ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এবং বর্তমানে “জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।