ফরিদপুরে বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংক মোড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ এখন ফ্যাসিস্টদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি সেখানে সক্রিয় অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং মুজিববাদ মুক্ত গোপালগঞ্জ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
বিকেল ১২টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সর্জিস আলম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জের নিরীহ জনগণকে আর হত্যা সহ্য করা হবে না। গতকাল (বুধবার) জনগণ আওয়ামী লীগের আরেকটি রূপ দেখেছে। মুজিববাদ থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করতেই আমাদের এই পদযাত্রা। গোপালগঞ্জে আমাদের এই প্রথম নয়, শেষও নয়।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যা-ই ঘটুক, জুলাই পদযাত্রা থামবে না। আমরা ৬৪ জেলাই পদযাত্রা সম্পন্ন করেই ঘরে ফিরব।”
তিনি আরও জানান, আগামী ৩ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে এনসিপির ইশতেহার ও জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে।
এর আগে, দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনতে ভারতপন্থীরা স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই দেশে মুজিববাদী রাজনীতির কোনো স্থান নেই। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে পারবে না।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানান, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে দলের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “জুলাই যতদিন থাকবে, আওয়ামী লীগের জায়গা থাকবে না। গোপালগঞ্জে হামলার জবাব দেয়া হবে। আমরা গোপালগঞ্জকে আওয়ামী লীগ মুক্ত করব।”
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা আহ্বায়ক মো. রিয়াজ।
এর আগে, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে খুলনার মধুখালী থেকে ফরিদপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান এনসিপি নেতারা। সেখান থেকে ২টা ১০ মিনিটে পদযাত্রা শুরু হয় এবং জনতা ব্যাংক মোড়ে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পরে আলীপুর এলাকায় দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন নেতারা এবং আলীপুর কবরস্থানে ‘জুলাই শহীদদের’ কবর জিয়ারত করেন। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ শেষে এনসিপি নেতারা রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হন।
সকালে গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল জানান, “এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে পুরো শহরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল।”
পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে ছিলেন। সাঁজোয়া যানেও টহল দিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
জেলা ছাত্রদলের নেতারা জানান, এনসিপির সমাবেশে কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে, তা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
জেলা বিএনপির নেতারা বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপিকে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।