জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেছেন, কক্সবাজার সফরের আগে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের সম্মতি নিয়েই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
দলীয় শোকজ নোটিশের জবাবে লিখিত ব্যাখ্যায় তিনি জানান, ৪ আগস্ট রাতে তিনি প্রথমে সরাসরি নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সফল না হয়ে তিনি এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে বিষয়টি জানান এবং অনুরোধ করেন যেন নাহিদকে অবহিত করা হয়।
প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসিরউদ্দিন জানান, সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাসনাত লিখেছেন, পরে অন্য নেতারাও ওই সফরে তার সঙ্গে যোগ দেন।
৫ আগস্ট ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ এর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, অনুষ্ঠানে ঘোষিত ‘আধাখেচড়া ও বর্জনমূলক’ বক্তব্যে তিনি হতাশ হয়েছেন।
তার ভাষ্য, “সরকারের উচিত ছিল একটি জন-আশাভরসা ভিত্তিক ঘোষণা দেওয়া। কিন্তু আমরা দেখেছি যারা আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, শহীদ পরিবার বা আহতরা—তাদের কেউ সেই ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।”
তিনি এ সফরকে ‘নীরব প্রতিবাদ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যেরও তিনি সমালোচনা করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব আগামী নির্বাচিত সরকারকে অর্পণ করা হবে।
হাসনাত বলেন, “এই বক্তব্য প্রকৃত আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুরু থেকেই আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে এসেছি, যা ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে দেবে।”
অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “যখন শহীদ ও আহতদের কণ্ঠকে চাপা দিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর কণ্ঠকে তুলে ধরা হয়, তখন আমি উপস্থিত হওয়াকে উপযুক্ত মনে করিনি। পরদিন ঢাকাও ত্যাগ করি কিছু আত্মমূল্যায়নের উদ্দেশ্যে।”
কক্সবাজার সফর ঘিরে পরবর্তী ঘটনা নিয়ে হাসনাত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি দাবি করেন, “এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিটি গতিবিধি নজরে রাখে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেই ফুটেজ পরে কিছু গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।”
তিনি বলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যম সেই ফুটেজে অপরাধ-ধর্মী ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করে মিথ্যা গল্প তৈরি করে, এমনকি যুক্ত করে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের গুজব, অথচ তিনি তখন দেশেই ছিলেন না।”
এই ঘটনাকে রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘অপরাধী’ হিসেবে প্রমাণ করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন হাসনাত।
তিনি বলেন, “এই ধরনের প্রচার আগেও দেখা গেছে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে। এখন নতুন বাংলাদেশে এ রকম কর্মকাণ্ড সত্যিই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।”
হাসনাত সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের নজরদারি ও প্রোপাগান্ডা শুধু বর্তমান নেতৃত্ব নয়, যেকোনো নাগরিকের বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে পারে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট এনসিপির পাঁচ সিনিয়র নেতা—নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী (প্রধান সমন্বয়কারী), হাসনাত আবদুল্লাহ (প্রধান সংগঠক, দক্ষিণ), সারজিস আলম (প্রধান সংগঠক, উত্তর), ডা. তাসনিম জারা (সিনিয়র যুগ্ম সদস্য-সচিব), এবং খালেদ সাইফুল্লাহ (যুগ্ম আহ্বায়ক)—‘জুলাই অভ্যুত্থান’ কর্মসূচি এড়িয়ে কক্সবাজার সফরে যান। পরদিন তাদের প্রত্যেককে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়।