আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকার পরও নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকায় ‘নৌকা’ রাখা হয়েছে—এ নিয়ে কড়া আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি একই সঙ্গে ‘শাপলা’ প্রতীক পেতে আইনি বাধা নেই বলেও দাবি করেছে এবং এ প্রতীক না পেলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
রবিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই দাবি জানায়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, প্রধান সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আব্দুল্লাহ, প্রধান সংগঠক (উত্তর) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ।
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্যে মুসা বলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হলেও নৌকা প্রতীক এখনও তালিকায় রয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, এটি আইনবিরোধী।”
তিনি বলেন, “সরকার যেহেতু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে এবং ইসি তার নিবন্ধন স্থগিত করেছে, আদালত বা সরকারের নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ‘নৌকা’ তালিকায় থাকতে পারে না।”
প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন বলেন, “নির্বাচনের আগে ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে। যেভাবে গঠিত হয়েছে, সেই আইনে সংশোধন আনতেই হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রমাণিত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের রাখা যেতে পারে। কিন্তু কিছু সদস্য নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো কাজ করছেন।”
‘শাপলা’ প্রতীক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের কোনো বিকল্প নেই। এটি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই। যদি কোনো বাধা দেয়া হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।”
জাতীয় প্রতীক নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে দাবি করে মুসা বলেন, “জাতীয় প্রতীক শুধু শাপলা নয়। সেখানে ধানের শীষ, তারা ও পাটপাতাও রয়েছে। এর মধ্যে ধানের শীষ বিএনপির প্রতীক, তারা একটি দলের, পাটপাতাও অন্য দলের। এমনকি কাঁঠালও একটি দলের প্রতীক। তাই শাপলাকে আলাদাভাবে জাতীয় প্রতীক বলা ভুল ব্যাখ্যা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নতুন করে আবেদন করেছি। শাপলা প্রতীক না দেওয়ার ব্যাখ্যা ত্রুটিপূর্ণ। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বাধা নেই।”
এনসিপি আবেদনপত্র অনুযায়ী নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করলে প্রতীক পাওয়ার অধিকার রাখে বলে জানান মুসা। তিনি বলেন, “আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত পাঠানোর আগেই আবেদন করেছিলাম। তাই শাপলা পাওয়ার অধিকার আমাদের।”
এর আগে ২২ জুন এনসিপি দলীয় নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয়। সেদিন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা শাপলা, কলম ও মোবাইল প্রতীক চেয়েছি। এর মধ্যে শাপলাই আমাদের অগ্রাধিকার। এটি গণমানুষের ও গণজাগরণের প্রতীক, বাংলাদেশের গ্রামীণ চিহ্ন।”
এদিকে, আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাইয়ের জন্য ১১৫টি প্রতীকের একটি সংশোধিত তালিকা প্রস্তাব করেছে, যেখানে ‘শাপলা’ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অন্যদিকে, একটি দলের নিবন্ধন পুনর্বহালের পর ‘তুলা’ প্রতীক ফিরিয়ে আনা হলেও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ‘নৌকা’ এখনও তালিকায় রয়েছে।