চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং কনটেইনার জট কমাতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি ১৭ জুলাই থেকে কার্যকর একটি সিদ্ধান্তে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি)-এর মাধ্যমে ১৬ ধরনের নতুন আমদানি পণ্যের ডেলিভারি অনুমোদন দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার অতিরিক্ত কনটেইনার ডেলিভারি সম্ভব হবে।
নতুন অন্তর্ভুক্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুধ ও ক্রীম, নারকেল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম (তাজা বা শুকনো), সালফার, কার্বনেটস, পলিমারস (পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিনসহ), অ্যাক্রিলিক পলিমার, অ্যামিনো রেজিন, ফিনিশিং এজেন্ট, কাগজ ও পেপারবোর্ড, সিরামিক টাইলস এবং অন্যান্য রাসায়নিক ও শিল্পজাত পণ্য।
এই সংযোজনের ফলে মোট অনুমোদিত পণ্যের সংখ্যা বেড়ে ৬৬টি হয়েছে, যা আগে ছিল ৫০টি। পুরাতন তালিকায় চাল, গম, ডাল, সরিষাবীজের মতো মৌলিক খাদ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, “বর্তমানে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি বছরে ৩ লাখ টিইইউ আমদানি পণ্য হ্যান্ডল করে। নতুন পণ্যগুলো যুক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে এবং বন্দরের ওপর চাপ কমবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, এই অনুমোদন তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এসেছে। “বন্দর থেকে পণ্য স্থানান্তর করে আইসিডিতে সরবরাহ করলে বন্দরের দক্ষতা বাড়বে এবং অব্যাহত চাপ হ্রাস পাবে।”
প্রসঙ্গত, রপ্তানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর পুরোপুরি আইসিডির ওপর নির্ভরশীল। বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও একই রকম সরবরাহ ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে।
বর্তমানে আইসিডিগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা বছরে এক লাখ টিইইউ, যার মধ্যে ১০ হাজার টিইইউ আমদানি এবং ৮ হাজার টিইইউ রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনে তারা ১৫ হাজার টিইইউ পর্যন্ত হ্যান্ডল করতে সক্ষম বলেও জানিয়েছেন বিকডার মহাসচিব।
চট্টগ্রামের অ্যাঙ্করেজ ও বে লিংক নামের দুটি নতুন আইসিডি খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আমদানি পণ্য হ্যান্ডল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া একে খান গ্রুপ নতুন একটি আইসিডি নির্মাণ করছে বলে নিশ্চিত করেছে বিকডা।
এনবিআর এর আগেও ৮ এপ্রিল ১২টি নতুন পণ্যের জন্য একই ধরনের অনুমোদন দিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল স্ট্যাপল ফাইবার, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পলিস্টাইরিন, ফ্লুটিং পেপার এবং দারুচিনি।
এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের ২০১৭ সালের সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বন্দরের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বাড়াতে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দর ইয়ার্ডের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টিইইউ হ্যান্ডল করেছে, যার মধ্যে আমদানি ১৭ লাখ ৮৬ হাজার এবং রপ্তানি ১৫ লাখ ৯ হাজার টিইইউ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ফুল কনটেইনার লোড (FCL) ডেলিভারি আইসিডিতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়া ১০ হাজার টিইইউ নিলামে ওঠা কনটেইনার অফ-ডকে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যাতে বন্দরের পাশাপাশি কাস্টমস ও আইসিডির প্রতিনিধিরা থাকবেন।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. আল আমিন জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনটি শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে— সব কনটেইনার বন্দর ছাড়ার আগে স্ক্যান করতে হবে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে অনুমোদিত পণ্যের আইসিডিতে ডেলিভারি, এবং বিশেষ ক্ষেত্রে কাস্টম কমিশনার দ্বৈত ডেলিভারি অনুমোদন দিতে পারবেন।
তবে আমদানিকারকদের একটি অংশ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “ভালো উদ্যোগ হলেও নিশ্চিত করতে হবে যেন এতে আমদানিকারকদের অতিরিক্ত খরচ বা দেরি না হয়। আইসিডিগুলোর সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতাও নিশ্চিত করতে হবে।”