ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে চলমান জাতীয় ফল মেলায় নতুন আলোচনায় এসেছে দেশের হারিয়ে যাওয়া অনেক দেশি ফল। এক সময় যেসব ফল গ্রামগঞ্জে সহজেই পাওয়া যেত, সেগুলো এখন গবেষণা ও বাণিজ্যিক চাষের মাধ্যমে আবারো জনসম্মুখে ফিরেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গতকাল শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী এই মেলা আজ (২০ জুন) শেষ হচ্ছে। মেলায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত দেশি ও বিদেশি ফল প্রদর্শন করছে। উপস্থিত দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর স্টলগুলোতে।
মেলায় বিএডিসি তাদের প্রান্তিক চাষীদের উদ্যোগে উৎপাদিত প্রায় ৫০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি ফল প্রদর্শন করেছে। এসব ফলের মধ্যে ছিল বাঘআঙুর, চাপা আলু, চালতা, তেঁতুল, আমড়া, কাওয়া, গাব, বাতাবি, জামরুল, গন্ধনগর, বনকাঁঠাল ও বিভিন্ন ধরনের জাম।
পাশাপাশি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, লেবু, এভোকাডো ও মিষ্টি জামরুলের মতো পরিচিত ফলও ছিল স্টলে। বিএডিসির উপপরিচালক ড. বশির আহমেদ বলেন, “দেশে ছয় ঋতুর ফলে ভরপুর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশি ফল হারিয়ে যাচ্ছিল। কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমরা সেগুলো ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।”
ডিএই এর স্টলে প্রদর্শিত হয়েছে প্রায় ৬০ ধরনের আম ও ১০০ প্রজাতির দেশি ফল। স্থানীয়ভাবে পরিচিত হলেও বাজারে খুব কম দেখা যায় এমন ফলের মধ্যে ছিল বেতফলও। ডিএই-এর অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “এই প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশি প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফল স্থান পেয়েছে। মানুষ প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছে।”
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এখনো প্রাকৃতিকভাবে বা সীমিত চাষে পাওয়া যায় এমন ৭০টির মতো অপ্রচলিত ফল রয়েছে। ২০২০ সালে ডিএই প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প শুরু করে যেটির লক্ষ্য ছিল এসব ফলের চাষ বাড়ানো। এর ফলে অনেক দেশি ফল স্থানীয় বাজারে ফিরছে।
এই ফলগুলো বাংলাদেশের জলবায়ুর জন্য উপযোগী, রোগের ঝুঁকি কম এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম। গবেষকরা বলছেন, উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষকদের এসব ফল চাষে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে ২৬টি সরকারি ও ৪৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মেলায় ফলচাষের নতুন প্রযুক্তি, উচ্চফলনশীল জাত ও বিষমুক্ত উৎপাদন পদ্ধতি তুলে ধরা হচ্ছে।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা ও জামও বিক্রি হচ্ছে। হিমসাগর, হাড়িভাঙা, নক ফজলি, আম রুপালি ও বারি-৪ জাতের আম ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কলা আম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, বেদানা লিচু ১২০০–১৪০০ টাকা প্রতি ১০০টি, চায়না-৩ লিচু ১০০০–১২০০ টাকা, ড্রাগন ফল ১৩০–২০০ টাকা কেজি, আর জাম বিক্রি হচ্ছে ২০০–২৫০ টাকা কেজি দরে।
তবে টানা বৃষ্টির কারণে দর্শনার্থী কম থাকায় বিক্রেতারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। রাজশাহী থেকে আসা বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, “প্রতি কেজিতে প্রায় ২০ টাকা খরচ হয়েছে। বাগান থেকেই বিক্রি করলে লাভ বেশি হতো।”
গোদাগাড়ির আরেক বিক্রেতা মো. তারিক হাসান বলেন, “৪০ মণ আম এনেছি, কিন্তু বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০–১২ মণ। এখন মনে হচ্ছে লোকসান হবেই।”
কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গবেষণা, বাজারজাতকরণ ও কৃষকের প্রশিক্ষণ বাড়ানো গেলে দেশি ফলের সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হবে।