নারায়ণগঞ্জের আলোচিত রাজনৈতিক পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য তানভীর আহমেদ টিটুর উত্থান স্থানীয় রাজনীতিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। নানা অভিযোগের তীরে বিদ্ধ এই টিটুর বিরুদ্ধে এখন উঠে আসছে তহবিল তছরুপ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার মতো গুরুতর অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈধ কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবসা না থাকলেও শামীম ওসমানের শ্যালক পরিচয়ের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের ঝুট কাপড় ব্যবসা, বালু ভরাট, জমি বেচাকেনা থেকে শুরু করে ক্লাব ও ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন পদ নিয়ন্ত্রণ করতেন টিটু। মাসিক লাখ লাখ টাকা আয় থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এসব অর্থ দিয়ে দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে গড়েছেন বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং প্রাসাদসম সম্পত্তি।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা যায় টিটুকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির পদে বসে অর্থ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে টিটুর বিরুদ্ধে। ক্লাবের ১৬ তলা ভবন নির্মাণে ব্যয়ের হিসেবে অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন এবং সদস্যদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত না দেওয়ার বিষয়গুলো তদন্তে উঠে এসেছে। আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ কমিটি বলছে, অন্তত ২৭ কোটি টাকা তহবিল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে একাধিক চেকের মাধ্যমে।
এছাড়াও ক্লাবের নতুন সদস্য নেওয়ার নামে প্রায় ৩৮২ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অতিরিক্ত ডোনেশন বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু চূড়ান্তভাবে ১৫০ জনকে সদস্যপদ দেওয়া হয়, বাকি ২৩২ জনের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও অনেকেই এখনো তা পাননি।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বর্তমান সভাপতি এম সোলায়মান মিয়া জানান, ক্লাবের সদস্যদের দাবিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে আর্থিক অনিয়ম ও তহবিল তছরুপের তথ্য পেয়েছে।
অন্যদিকে, শামীম ওসমানের আশীর্বাদপুষ্ট টিটুর এই উত্থান এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে, সামনে বড় ধরনের আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই সাম্রাজ্যের শেষ কোথায়?