ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনীতি এখন আর ধনীদের একচ্ছত্র ক্ষেত্র নয়, বরং এটি হতে হবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত। তিনি সবাইকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদ বলেন, “যারা দেশ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, তাদেরই রাজনীতির মালিক হতে হবে। রাজনীতি জিততে হবে জনগণের।”
তিনি বলেন, “রাজনীতি কোনো দূরের বিষয় নয়। এটি সরাসরি নির্ধারণ করে দেশের শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনা। রাজনীতিকে ঘৃণা করার সময় শেষ—এখন সময় রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের করে তোলার।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আন্দোলনের কথা স্মরণ করে নাহিদ বলেন, “সেদিন আমরা সংসদে প্রবেশ করেছিলাম সমতা ও গণতন্ত্রের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নটি এখনো পূর্ণ হয়নি, তবে সংগ্রাম থেমে যায়নি।”
তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “সেই আন্দোলন সম্ভব হয়েছিল সাধারণ মানুষ—পিতা-মাতা, বোন, ও সাহসী ছাত্র-যুবকদের অংশগ্রহণে। তাদের আত্মত্যাগই পরিবর্তনের সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
সংসদকে দেশের নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “সংসদ থেকেই আইন তৈরি হয়, সংবিধানের রূপ নির্ধারিত হয়। ৫ আগস্ট জনগণ সেই সংসদকে পুনরুদ্ধার করেছে, যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল।”
তিনি আসন্ন সংসদকে বাংলাদেশের ইতিহাসে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদ” বলে অভিহিত করেন। তার মতে, সংসদকে অবশ্যই ‘জুলাই চার্টার’-এর সংস্কারসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি রিফর্ম কাউন্সিল গঠন করতে হবে।
দুর্নীতিমুক্ত নতুন নেতৃত্বের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা আর কালো টাকাওয়ালা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সংসদে দেখতে চাই না। এবার আমরা চাই সৎ, দেশপ্রেমিক ও দূরদর্শী মানুষ—যারা সত্যিকারের জনগণের প্রতিনিধি হবেন।”
তিনি শিক্ষক, অধ্যাপক, উদ্যোক্তা, নারী অধিকার কর্মী, পরিবেশবাদী, ছাত্রনেতা, আলেম, শ্রমিক নেতা ও কৃষকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
“দেশের সমস্যার সমাধান জানেন যারা, তারাই সংসদে আসুন। এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিন,” বলেন নাহিদ।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা দেশের রাজনীতিতে প্রয়োজন। ফিরে এসে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখুন।”
জুলাই চার্টার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নাহিদ বলেন, “আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। রাস্তায় যে সংস্কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা সংসদের ভেতরেও গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে।”
তার মতে, রাজনীতি হতে হবে সাহস, সততা ও জনগণের বিশ্বাসের ভিত্তিতে। “মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা চায় নতুন, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। এনসিপি তাদের পাশে থাকবে। আমাদের শক্তি হবে জনগণের বিশ্বাস, অর্থ নয়,” বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম জানান, এনসিপি আগামী নির্বাচনে এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেবে যারা ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দলের নির্বাচনী প্রতীক হবে ‘শাপলা কুঁড়ি’—যা নদীমাতৃক বাংলার পবিত্রতা ও নবজাগরণের প্রতীক।
“আজ আমরা কুঁড়ি; ইনশাআল্লাহ একদিন ফুটব,”—বলেন নাহিদ ইসলাম।
