শনিবার উভয় দলের জন্য ভ্রমণ দিবস হিসেবে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সিলেট টেস্ট চার দিনে শেষ হওয়ায় স্বাগতিক বাংলাদেশ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগেভাগে ঢাকায় উড়ে আসে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের ভেন্যু ঢাকা।
আয়ারল্যান্ড তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় অটল থেকে সিলেটে অবস্থান করে রবিবার সকালে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়। সফরকারী এবং বাংলাদেশ দলের অধিকাংশ সদস্য বর্ধিত বিশ্রাম উপভোগ করলেও অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার মুশফিকুর রহিম এক মুহূর্তও নষ্ট করতে রাজি হননি।
৩৮ বছর বয়সী মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন। শনিবার সকালে তিনি মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যক্তিগত ব্যাটিং সেশনের জন্য হাজির হন।
সোমবার দলের অফিসিয়াল ট্রেনিংয়ের আগেই তিনি আবার আগেভাগে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি তার ২০ বছরের গৌরবময় ক্যারিয়ারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য—প্রস্তুতির প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে রওনা হওয়ার আগেই মুশফিক সাপোর্ট স্টাফকে তার পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রাউন্ড কর্মীরা ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই নেট এবং সুবিধা তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুত করে রাখেন।
রবিবার ডেইলি সানকে একজন বিসিবি কর্মকর্তা বলেন, “তিনি নিশ্চিত করেছেন সবকিছু তার জন্য প্রস্তুত। সিলেটে থাকতে থাকতেই তিনি আমাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন কী করতে চান এবং নেট কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আমরা গ্রাউন্ড সেই অনুযায়ী সেট করেছি।”
বাংলাদেশের সবচেয়ে শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত মুশফিকের কাজের নীতি তার দীর্ঘায়ু এবং ধারাবাহিকতার মূল কারণ। বিশেষ করে টেস্ট ফরম্যাটে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
বুধবার শুরু হতে যাওয়া ঢাকা টেস্ট ব্যক্তিগত গৌরবের বাইরেও গুরুত্ব বহন করে। সিলেটে ইনিংস জয়ের পর মুশফিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্লিন সুইপ নিশ্চিত করে দলের গতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রায় এটি গর্বের মুহূর্ত। তাদের অন্যতম সেরা দূত বিশ্বের একচেটিয়া ক্লাবে যোগ দিতে চলেছেন—এবং তিনি তা করছেন তার স্বভাবসুলভ শৈলীতে: নীরবে, অধ্যবসায়ী এবং সবসময় এক ধাপ এগিয়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গেছে, মুশফিককে স্মারক ক্রেস্ট এবং বিশেষ ব্লেজার দিয়ে সম্মানিত করা হবে। তার পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হবে ঢাকা টেস্টের আগে বা মাঝে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে।
বোর্ড ২০১৭ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ১০০তম টেস্টের একটি আইকনিক ছবি শ্রদ্ধাঞ্জলির অংশ হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবছে। সেই ম্যাচে মুশফিকের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ চার উইকেটে জিতেছিল। এটি আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে প্রতীকী সংযোগ তৈরি করবে।
সমর্থকরাও নিজস্ব শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রস্তুত করছেন। একটি ডেডিকেটেড মুশফিক ফ্যান গ্রুপ বিশেষভাবে ডিজাইন করা “১০০” লেখা শার্ট পরে ম্যাচে উপস্থিত হবে। মিরপুরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির লক্ষ্য তাদের।
মুশফিকের এই নিবেদন তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা। টেস্ট ক্রিকেটে তার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের গর্ব। ঢাকা টেস্টে তার ১০০তম ম্যাচ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
