Tuesday, October 14, 2025
Homeজাতীয়বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ছয় দফা প্রস্তাব রাখলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস

বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ছয় দফা প্রস্তাব রাখলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস

রোমে বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ছয় দফা প্রস্তাব রাখলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) সদর দপ্তরে সোমবার অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (World Food Forum) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছয় দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস।

তিনি বলেন, “ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার ফল।”

বিশ্ব খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিনি ছয়টি প্রস্তাব দেন।

প্রথমত, যুদ্ধ বন্ধ করে সংলাপ শুরু করতে হবে এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় খাদ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের প্রতিশ্রুতি পূরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
তৃতীয়ত, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গড়ে তুলে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা স্থিতিশীল করতে হবে।
চতুর্থত, তরুণ উদ্যোক্তা ও স্থানীয় উদ্ভাবনকে অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।
পঞ্চমত, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ও বাণিজ্যনীতিতে ভারসাম্য আনতে হবে।
ষষ্ঠত, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে প্রবেশাধিকার বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

অধ্যাপক ইউনুস বলেন, “২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ পৃথিবীতে পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে। এটি উৎপাদনের নয়, নৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা।”

তিনি আরও বলেন, “যেখানে ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্রে ব্যয় হয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি মানবতার ব্যর্থতা।”

ড. ইউনুস সামাজিক ব্যবসার ধারণা তুলে ধরে বলেন, “লাভের সর্বাধিকীকরণের পুরনো পদ্ধতি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলেছে। সামাজিক ব্যবসা—যেখানে ব্যক্তিগত লাভ নয়, সমস্যা সমাধানই মূল লক্ষ্য—সেই পথেই টেকসই ভবিষ্যৎ সম্ভব।”

তিনি তাঁর ‘থ্রি-জিরো ওয়ার্ল্ড’ ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, “শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নির্গমন—এটি কেবল স্বপ্ন নয়, এটি মানবজাতির টিকে থাকার অপরিহার্য শর্ত।”

বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে কীভাবে দরিদ্র নারীরা উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টি দূর করছে। এসব কেবল তত্ত্ব নয়, বাস্তব উদাহরণ।”

তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যেন চাকরির অপেক্ষায় না থেকে চাকরি তৈরি করে। তাদের হাতে আছে প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনা।”

ড. ইউনুস বলেন, “যুবসমাজে বিনিয়োগ করা মানেই শুধু পৃথিবীকে খাওয়ানো নয়, বরং পৃথিবীকে বদলে দেওয়া।”

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছি। ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও সহায়তা দিচ্ছি। এখন আমরা ধান, সবজি ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।”

তিনি জানান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়েছে, পুষ্টি ও কৃষিবৈচিত্র্য বেড়েছে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।

শেষে তিনি বলেন, “এই ফোরামের মূল স্তম্ভ—তরুণ, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, বরং রূপান্তরের হাতিয়ার।”

ড. ইউনুস আশা প্রকাশ করেন, সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক, ক্ষুধামুক্ত ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

RELATED NEWS

Latest News