প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও জনগণের ক্ষমতার প্রতিশ্রুতি প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হবে।
সোমবার রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (World Food Forum)–এ মূল বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “গত বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য তাদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা। তাদের চাওয়া ছিল সহজ—ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া জনগণের হাতে, গড়ে তোলা একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আস্থাভিত্তিক সমাজ।”
তিনি আরও বলেন, “আজ সেই তরুণরাই দেশের প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে কাজ করছে। তারা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলছে, যেখানে শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জনগণ।”
খাদ্যে আত্মনির্ভর বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরেন ইউনূস
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের ভূমি ছোট—ইতালির অর্ধেকেরও কম—তবু আমরা ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ করছি, এমনকি মিয়ানমার থেকে আগত ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিশ্বের শীর্ষ চাল, সবজি ও স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষকদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় জমির ফসল তোলার হার বেড়েছে ২১৪ শতাংশে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা ১৩৩টি জলবায়ু সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি, কৃষ mechanisation–এ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি, শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, শিশুদের পুষ্টিহীনতা কমাচ্ছি এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছি।”
আরো পড়ুন: তিন শূন্যের বিশ্ব গড়তে সামাজিক ব্যবসার ডাক দিলেন ড. ইউনূস
যুবদের নেতৃত্বে টেকসই ভবিষ্যতের বার্তা
বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে FAO–এর মহাপরিচালক কু ডংইউ তরুণদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আজকের প্রজন্ম সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ। আমি তাদের শুধু অংশগ্রহণ নয়, নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানাই। সাহসের সঙ্গে কথা বলুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন, একে অপরকে অনুপ্রাণিত করুন।”
এই বছরের ফোরামের মূল থিম ছিল “Hand in Hand for Better Foods and a Better Future”। ফোরামটি FAO–এর ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়, যার লক্ষ্য প্রজন্ম, অঞ্চল ও খাতভিত্তিক সহযোগিতা বাড়িয়ে টেকসই খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বতসোয়ানা, কাবো ভার্দে, কোস্টারিকা ও তুরস্কের বিভিন্ন মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন | বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ছয় দফা প্রস্তাব রাখলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস
বৈশ্বিক সহযোগিতায় খাদ্য নিরাপত্তার অঙ্গীকার
বিশ্ব খাদ্য ফোরাম এখন এক বৈশ্বিক যুবনেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তিনটি মূল উদ্যোগ—গ্লোবাল ইয়ুথ অ্যাকশন ইনিশিয়েটিভ, সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন ফোরাম ও হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম—এর মাধ্যমে এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের পথ সুগম করছে।
ড. ইউনূস বলেন, “আজকের যুব সমাজ, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ একসাথে কাজ করলে বিশ্বকে পরিবর্তন করা সম্ভব। এই রূপান্তর ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।”