Monday, June 23, 2025
Homeজাতীয়১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশে ফিরলেন ইউনুস, জাপান-বাংলাদেশ নতুন সম্পর্ক

১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশে ফিরলেন ইউনুস, জাপান-বাংলাদেশ নতুন সম্পর্ক

ডেপ্রবা ডেস্ক: চার দিনের জাপান সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস। কাগজে-কলমে চুক্তির ফর্দ বেশ লম্বা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন—এসবের ফল কতটা দ্রুত দেখা যাবে?

জাপানের নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকা রওনা হন। রাতে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলছেন, “সফর সফল হয়েছে।”

কিন্তু “সফল” মানে কি?

বাণিজ্য চুক্তি

শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউনুস। উষ্ণ সম্পর্ক, বন্ধুত্বের বার্তা—সবই ছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ছিল, বাংলাদেশ ও জাপান শিগগিরই একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

শিগগিরই। শব্দটা পরিচিত। কিন্তু বাস্তবে “শিগগির” মানে কতদিন?

জাপান ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা প্রকল্পে, ৬৪১ মিলিয়ন ডলার জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ রেল প্রকল্পে এবং ৪.২ মিলিয়ন ডলার মানবসম্পদ উন্নয়নে।

চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, ছবি তোলা হয়েছে। কিন্তু অনেক বাংলাদেশির মনে প্রশ্ন—এ টাকাগুলো বাস্তবে কতদিনে কাজে লাগবে?

জাপানে কর্মী সংকট, বাংলাদেশে কর্মী প্রস্তুত

বৃহস্পতিবার মানবসম্পদ সেমিনারে দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়। লক্ষ্য—বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানে কাজের সুযোগ তৈরি করা। পরিকল্পনা বলছে, আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ১ লাখ বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেবে জাপান।

শুনতে ভালো লাগে। অনেক তরুণের জন্য এটা স্বপ্নের মতো।

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা কি এত সহজ? ভাষার বাধা? আবাসন? চাকরির নিশ্চয়তা? অনেক কিছুই এখনও অস্পষ্ট।

আর একদল বলছে—শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে চুক্তিগুলো খুব পরিষ্কার নয়। কর্মীদের কি সেখানে আইনি সহায়তা থাকবে? সংস্কৃতি বা ভাষার প্রশিক্ষণ? অনেক প্রশ্নই অনুত্তরিত।

ব্যবসা, কূটনীতি আর কিছু কৌশল

জাপানে থাকাকালীন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ অংশ নিয়ে আরও ছয়টি MoU সই করেন ইউনুস। এইগুলো মূলত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত।

এর পাশাপাশি ‘নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া’ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন। একই অনুষ্ঠানের ফাঁকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে বাংলাদেশকে আসিয়ান সদস্য করার অনুরোধ জানান।

এটা সাহসী কূটনীতি। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন—এটা হয়তো সময়ের আগেই চাওয়া। সদস্য হওয়া সহজ নয়। ভেতরে অনেক রাজনীতি আছে, অনেক সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে।

সম্মানসূচক ডিগ্রি ও একধরনের নীরব স্বীকৃতি

এই সফরের এক কোমল মুহূর্ত ছিল সোকা ইউনিভার্সিটির সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান। ইউনুসের সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানকে সম্মান জানানো হয়েছে।

২০০৪ সালে ‘নিক্কেই এশিয়া প্রাইজ’ পাওয়া ইউনুসের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক নতুন নয়। তবে এখনকার সফরটা ছিল একটু ভিন্ন।

কারণ ইউনুস শুধু অর্থনীতির মানুষ নন। তার উপস্থিতি অনেক সময় বার্তা বহন করে। এমন এক বার্তা, যা পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বড়।

তারপর?

এই সফর যে গুরুত্ব বহন করে, তাতে সন্দেহ নেই। চুক্তি হয়েছে, প্রতিশ্রুতি মিলেছে।

কিন্তু মানুষের মনে প্রশ্ন এখন—এগুলো বাস্তবে আসবে কবে? কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া কি কার্যকরভাবে চালু হবে? রেল প্রকল্প কবে শুরু হবে?

অন্য কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলবে না—এই সফর কেমন প্রভাব ফেলবে। কিন্তু অনুভব করা যায়—এই সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এর ফলাফল বুঝতে সময় লাগবে। অপেক্ষাটা শুরু এখন।

RELATED NEWS

Latest News