রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত জাতীয় জুলাই সনদ নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে নতুন দাবি তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। সনদে ‘জুলাই বীরদের’ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার এই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলমান মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘পুরোপুরি অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে বর্ণনা করে ড. মঈন খান জোর দিয়ে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের দলিল নিয়ে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, “এটা ভাবা অবাস্তব যে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ রাতারাতি সব বিষয়ে একমত হয়ে যাবে। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমরা কার্যত একদলীয় শাসনব্যবস্থা যেমন বাকশালের দিকে ফিরে যেতাম।”
ড. মঈন খান যুক্তি দেন যে, জুলাই সনদকে সত্যিকার অর্থে অর্থবহ করতে হলে ‘জুলাই বীরদের’ স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাঁর মতে, ‘জুলাই বীর’ হলেন সেইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আন্দোলন, যারা ‘জুলাইয়ের চেতনার রূপরেখায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন’।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হলো না এবং কেন মূল আলোচনায় মনোযোগ না রেখে ‘অসম্পর্কিত বিষয়ের এক অন্তহীন ক্যানভাস’ খুলে দেওয়া হলো। একই সঙ্গে, এই প্রক্রিয়া সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দক্ষতা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ড. মঈন খান বলেন, “প্রশ্ন করতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের আদৌ এমন একটি জটিল প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার প্রয়োজন ছিল কি না। দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের জন্য এই কাজটি ছেড়ে দেওয়াই কি আরও বেশি যুক্তিযুক্ত ছিল না?”
জুলাই সনদের বৈধতা ও পরিধি নিয়ে বিতর্ক যখন বাড়ছে, তখনই ড. মঈন খানের এই মন্তব্য এলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই বক্তব্য বিরোধী দলের অভ্যন্তরীণ সংশয়কে প্রতিফলিত করে এবং অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার ব্যাপক টানাপোড়েনকে স্পষ্ট করে তোলে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদকে জাতীয় ঐকমত্যের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করেছে, তবে ড. মঈন খানের মতো সমালোচকরা মনে করছেন, ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এই প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ এবং দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে যাদের তিনি ‘জুলাই বীর’ বলে অভিহিত করছেন, তাদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া এই সনদ পূর্ণতা পাবে না বলে তারা মনে করেন।